Tuesday, 8 December 2015

প্রবৃত্তির স্বাভাবিক নিবৃত্তি

এখানে মানুষের দুটো মৌলিক প্রবৃত্তির মধ্যে একটি নিয়ে কথা বলব।এ দুটোর একটিতে ক্ষুধা নিঃসন্দেহে আগে আসে,আর অপরটি যেটি অশান্তি,অনিয়ম,অবিচার তথা ফিতনা সৃষ্টিতে যেটি গুরুত্বপূর্ণ  প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম,সেটা ভেবে দেখার বিষয়।একটা ব্যাপার পরিষ্কার যে,দুটোই আল্লাহ প্রদত্ত natural phenomena.দুটোর কোনটিই "আল্লাহ প্রদত্ত নিয়মে নিবৃত্তি করলে" ঘৃনা বা লজ্জার কোন কারন নেই।কিন্তু এই "আল্লাহ অনুমোদিত স্বাভাবিক নিবৃত্তি" কোনটাকে বলব।প্রতিটি মুসলিমের তো বটেই,সামগ্রিকভাবে সকল বিশ্ববাসীর জন্য জানা প্রয়োজন।তাই এখানে মৌলিক প্রবৃত্তির দ্বিতীয়টি অর্থাৎ যৌন সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলব-

খুঁটিনাটিতে না গিয়ে যদি এক বাক্যেই ইসলামের দৃষ্টিতে যৌন বাসনার নিবৃত্তির অনুশাসনকে প্রকাশ করতে চাই তাহলে তা হবে," তাহলে সকল যৌন চাহিদার নিবারন কেবল বিয়ের মাধ্যমে ঘটতে হবে"।কিন্তু এই কথাটা বাস্তবায়ন করতে গেলে,আজকের বিশ্বের devised,engineered আর manufactured বিনোদন শিল্পের সব বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাবে। পৃথিবীর night entertainment বা "আলো ঝলমল নারী মাংসের বিপনি" বা থাইল্যান্ডের ব্যাংককের patpong বা নিউইয়র্কের Las vegas এর রাতকে দিন করা কোটি কোটি ডলার ব্যায়ে ব্যবস্থা করা আলোক সজ্জা নিভে গিয়ে নিমিষেই মৃত্যু নগরীতে পরিনত হবে।

পৃথিবীর মানুষ humanoid হবার বদলে ভুলেই গিয়েছে,ঐ প্রবৃত্তি সত্যিই একদিন আল্লাহর নিয়ামত ছিল,যার মাধ্যমে মানুষ সাকিনাহ লাভ করতে পারত। ক্ষুধা নিবৃত্তির নিমিত্তে যেমন ভাতকে পচিয়ে চোলাই তৈরি করে দুর্গন্ধযুক্ত,বিষাদ করে খেয়ে মাতলামি করলে, আল্লাহর নিয়ামতের অবমাননা করা হয় যা হালাল বা বৈধ হবে না,তেমনি যৌন চাহিদার মত একটা পবিত্র নিয়ামতকে বিয়ের মাধ্যমে সঠিক পন্থায় উপভোগ না করে,বিকৃত বা ঘৃন্যভাবে করে নিজেকে,নিজ পরিবেশকে ও ভবিষ্যত প্রজন্মকে অনিশ্চয়তা, অস্থিরতা,অতৃপ্তি ও অবিশ্বাসের দিকে পরিচালিত করছে।কাফির সাম্রাজ্য গুলো যৌনতাকে কত ঘৃন্য ও বিকৃত পর্যায়ে নিয়ে গেছে,তা সবারই কম বেশি জানা আছে।আর আজ আমরা তাদের পদাংকই অনুসরন করছি।আর আমাদের এই দেশে আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু -বান্ধব মহলে অসুন্দর আর অপবিত্র হওয়ার যে প্রতিযোগিতা পরিলক্ষিত হয়,তা সত্যিই পীড়াদায়ক।

পৃথিবীর সব মুখ্য ধর্মের মাঝে ইসলামই একমাত্র ধর্ম,যা যৌন প্রবৃত্তির সঠিক নিবৃত্তিকে এক গুরুত্বপূর্ণ আসনে বরাদ্দ করেছে।আর সকল মত তথা সমাজব্যবস্থার মাঝে,ইসলামই একমাত্র সমাজব্যবস্থা যা female sexuality কে সম্মান করে এবং স্বীকৃতি দেয়।আজকের secular platform থেকে কথা বলতে গিয়ে অনেকেই সমাজ ব্যবস্থাকে জুড়ে দেয়,যা বাহ্যত কোন ধর্মের নয় কিন্তু ধর্মের কথা উহ্য থেকেই যায়।

তথাকথিত বিশেষজ্ঞ sigmund freud যে একজন ইহুদি ছিল।তিনি বলেন,কিছু আদিবাসী সমাজে নারীর প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়,কিন্তু ইসলাম নারীকে ধর্মীয় ও সামাজিক পর্যায়ে যে সম্মান দিয়েছে এক কথায় তা অদ্বিতীয়।
ইসলামের চরম শত্রু নিউইয়র্ক টাইমসের জুডিথ মিলার, রাসুল সাঃ নারী জাতির মধ্যে যে অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন তা যুগান্তকারী বলে আখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে।
Geraldine Brooks একজন ইহুদি বধূ হয়েও তার বইতে  বলেছেন, ৭ম শতাব্দির মুসলিম মেয়েরা তাদের যৌনতার যে সম্মান ও অধিকার লাভ করত,সত্যিই তা প্রশংসনীয়।

আজকের নামধারী মুসলিমদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরতে চাই (হয়তবা সবার জানা থাকতে পারে)-

১. ৭ম শতাব্দীর একজন মুসলিম মেয়ে হেঁটে গিয়ে একজন পুরুষের কাছে গিয়ে বলতে পারত," আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই,আপনি কি আমাকে বিয়ে করতে পারবেন"।

২. যৌন অতৃপ্তির দায়ে একজন স্ত্রী কেবল তার স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারত।

৩. পরিনত ও প্রাপ্ত বয়স্ক নারী বিবাহের ক্ষেত্রে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের অধিকার ইসলাম দিয়েছে,তা কবুলের মাধ্যমে সাম্প্রতিক কাল পর্যন্ত বিদ্যমান।তাকে জোর করে কবুল বলানো হলে এবং সে তাতে অসম্মতি জ্ঞাপন করলে  সে বিবাহ automatic বাতিল হয়ে যায়।

৪. ইহুদী ও খ্রিস্ট ধর্মে মেনেই নেয়া হত,নারীদের কোন যৌনাধিকার নেই।কেবল তারা পুরুষদের উপভোগ করা ও সন্তান জন্মদানের জন্য সৃষ্ট।সেজন্য মেয়েদের যৌনতাকে ঘিরে পৃথিবীতে সব আজগুবি গল্প প্রচলিত রয়েছে যে,উত্যক্ত বা উদ্দীপ্ত না করলে একজন নারী সারা জীবন যৌন বাসনা ছাড়াই কাটিয়ে দিতে পারবে।খ্রিস্টধর্মের 'নান' সংস্কৃতির উদ্ভব এইসব ভ্রান্ত ধারনা থেকেই।ইহুদি সেই sigmund freud মায়ের স্তন্যপান থেকে শুরু করে যাবতীয় কর্মকান্ডকে যৌনকর্ম হিসেবে দেখাতে চেয়ে মানুষকে চতুষ্প জন্তুর চেয়ে নিচের নামিয়ে দেওয়ার পায়তারা করেছিল, তবুও নারীর যৌনতার অসারতা প্রচার করতে গিয়ে নারীকে vegetables বা শাকসবজির পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে।
অথচ আজকের নারীবাদ Naome wolfe বলার ১৪০০ বৎসর আগেই ইসলামের সেই স্বর্নযুগের শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের কাছে শুনেছি, নারীরা "Very much capable of getting and giving pleasure".আর সেজন্যই ইসলামের "Segregation of Sex" এর পর্দাপ্রথার বা আলাদা বিচরনের (মাহরাম/ননমাহরাম) ক্ষেত্রে এত প্রাধান্য।

উল্লেখ্য হিন্দুধর্মেও নারীকে পুরুষের নিমিত্তে সৃষ্টি বলে মনে করা হয়,সেজন্যই তো সতীদাহ প্রথার মত জঘন্য প্রথা হিন্দু সমাজে বিদ্যমান ছিল।এতে স্বামী মারা গেলে জীবিত স্ত্রীকেও আগুনে ঝাঁপ দিতে হত,যদিও সে কিশোরী হয়।আবার বিধবাদের কোন যৌন স্পৃহা নেই বলে বিধবা বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল।
সেজন্য ইসলাম সাবালক/সাবালিকার বিয়ে,বিপত্নীক/বিধবাদের বিবাহ ও স্ত্রীকে পরিপূর্ন যৌন তৃপ্তি দেওয়ার ব্যাপারে স্বামীকে তাগিদ দিয়েছে- আর এসব ৭ম শতাব্দীর সোনালী যুগের ধর্মীয় ও সামাজিক করনীয়।

৫. স্বামীর বিরহে কাতর একজন মহিলা আক্ষেপ করে ঐ সংক্রান্ত কবিতা বা গান গাইছিলেন।শুনে ওমর (রাঃ) তার মেয়ে হাফসা (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলেন,একজন বিবাহিতা নারীর কাছে তার স্বামীর অনুপস্থিতি কত দিন পর অসহ্য মনে হতে পারে।তিনি বললেন,৪ মাস।এরপর তিনি নিয়ম করলেন,কোন সৈন্য স্ত্রীর অনুমতি ব্যতিত ৪ মাসের বেশি বাইরে থাকতে পারবে না।নারীর যৌনতাকে কিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এই ঘটনায়।শুধু তাই নয়,কঠোর এক পিতা তার মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেছে এ ব্যাপারে। কারন,এটা আল্লাহ প্রদত্ত প্রবৃত্তি--ছ্যা ছ্যা করার মত কোন dirty বিষয় নয়।

৬. যৌনবোধ বা স্পৃহাকে ইসলাম গুরুত্ব দেয় বলে,স্বামীর অনিচ্ছায় নফল ইবাদতে নিষেধ করা হয়েছে।

৭. একমাত্র হজ্জ ছাড়া কোন অবস্থাতেই দাম্পত্য সংসর্গকে নিষিদ্ধ করা হয় নি।

৮. এক সাহাবী নিজের স্ত্রীকে ছেড়ে বাইরে কোথাও রাত্রিযাপন করেছিলেন।রাসুল (সাঃ) তাকে স্ত্রীর কাছে গিয়ে তার হক আদায় করতে বলেছিলেন।

পয়েন্টগুলোকে এজন্য উল্লেখ করলাম যে,আমরা যে সময়টাকে আমাদের জন্য আদর্শ ও অনুসরনীয় মনে করব,সে সময়টাতে অর্থাৎ মদীনার স্বর্নযুগে যৌন স্পৃহা,দাম্পত্য সম্পর্ক,দাম্পত্য সুখ ও সে সময়ের স্ত্রী জাতির যৌনতা ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট বিষয় সমূহকে কি চোখে দেখা হত বা এসব নিয়ে কি ধ্যান ধারনা ছিল সে সবকে চোখের ও হাতের সামনে reference হিসেবে রাখতে।

No comments:

Post a Comment