জীবন সঙ্গিনীর কাছে একজন আদর্শ পুরুষ হওয়ার কিছু কথা

ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন," একে অন্যকে ভালবাসে এমন দুজনের জন্য বিয়ের মত উত্তম আর কিছু আমি দেখি না"(ইবনে মাযাহ,বিয়ে/১৮৪৭)।

যখন এটি ইসলামি শরীয়াহ অনুযায়ী করা হয় তখন ভালোবাসার এ সম্পর্কটি ইবাদাতে পরিনত হয়।ইসলাম হালালকে সহজ করেছে,আর হারামকে করেছে কঠিন।এজন্যই বিয়ে এতটা সহজ,সরল ও বাহুল্য ব্যয় থেকে মুক্ত।কিন্তু আজ আমরা এমন এক পৃথিবীতে বসবাস করছি,যেখানে হালালকে ব্যয়বহুল,জটিল ও কঠিন করে ফেলা হয়েছে,আর হারামকে করা হয়েছে সহজলভ্য।মুল্যবোধের এই বিকৃতির কুফল এখন সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে।

ইসলাম স্বামী স্ত্রীর পারস্পারিক ভালো আচরনকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।আর এই বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্কে আরো সুন্দর,মধুর ও টিকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয় যা তাদের ভালবাসাকে প্রতিদিন নতুনত্ব করে তুলবে,সম্পর্ককে আরো গাঢ় করবে। রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল "কে সবচেয়ে ভাল মানুষ?" তিনি বলেন,"যে তার স্ত্রীর কাছে ভাল"।আর একে অপরের কাছে ভাল মানুষ হওয়ার জন্য দুজনেরই আন্তরিকতা থাকা প্রয়োজন।

আল্লাহপাক কৃতজ্ঞতার ব্যাপারে কৃতজ্ঞদের কে অনুগ্রহ বৃদ্ধি করে দেওয়ার ওয়াদা করেছেন।আবার অকৃতজ্ঞদের ব্যাপারে শাস্তির হুশিয়ারি দিয়েছেন।তাই এই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একে অপরের মধ্যে তাদের দাম্পত্য জীবনকে সুখি করে তুলবে।তাই জীবনসঙ্গীকে প্রায়ই তার ভাল গুনগুলোর প্রশংসা করে কৃতজ্ঞতাভরে তাকে ধন্যবাদ দেয়া,দাম্পত্য জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট সৃষ্টি করবে। বিরক্ত ও অনিহা ভাব নিয়ে ধন্যবাদ দেয়া,আসলে ধন্যবাদ নয়।আর যদি এমন মনে হয়, আচমকা ধন্যবাদ শুনে জীবনসঙ্গী প্রচন্ড অভিঘাতে মারা যাবে,তবুও ধন্যবাদ দিয়ে অন্তত তাকে খুশি মনে মরতে দেয়া উচিত।

পরস্পরের ক্ষেত্রে খারাপ স্মৃতিকে ভুলে,সুন্দর স্মৃতির সুরভিতে মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ভরিয়ে তোলার মাধ্যমে পরস্পরের কাছে হিরো/হিরোইন হওয়া যেতে পারে।খারাপ স্মৃতি শুধু ময়লা-আবর্জনার মত দুর্গন্ধই ছড়াবে।এক্ষেত্রে সঙ্গীকে সুন্দর স্মৃতি উপহার দেওয়া।সুন্দর স্মৃতি বলতে এমন কিছু বোঝাতে চাচ্ছি,যে উপহার গুলোর দিকে তাকিয়ে বা মনে করে,সেই সুন্দর মূহুর্তের,সুন্দর স্মৃতিগুলোকে মনে রাখা যাবে।কোন উপহার দিলেন সেটা মুখ্য নয়,কিভাবে দিলেন সেটাই মুখ্য।নিজের সৃজনশীলতা এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে।ভাবতে হবে কিভাবে সঙ্গীকে খুশি করা যায়।সেজন্য সবচেয়ে সুলভ,ভালো কিন্তু শক্তিশালী স্মৃতি হতে পারে লম্বা আলিঙ্গন ও চুম্বন।দিনে কয়বার আপনি এই উপহারটি জীবনসঙ্গীকে দেন,তাকে কয়বার চুমু দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে তার স্ত্রীদের চুমু দিতেন ও আলিঙ্গন করতেন।তিনি বলেন," নিজের স্ত্রীদের কাছে ভাল হও,আমি আমার স্ত্রীদের কাছে উত্তম"।এটা করলে দুটি দিকে লাভবান হওয়া যাবে।একটি হল একটি সুন্নাত পালন,অপরটি নিজেদের মধ্যে অন্তরঙ্গতা সৃষ্টি তথা ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।

সবকিছুর শুরু আর শেষ আল্লাহর সন্তুষ্টির সাথে।কাজেই এমন সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে,যা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে।ভালো কাজে একে অপরকে সহায়তা করা।এক্ষেত্রে একসাথে সালাত আদায় করা,দীর্ঘদিন এক সাথে থাকা,একে অন্যকে তাহাজ্জুদের জন্য জাগিয়ে তোলা,একে অন্যের কুরআন তিলওয়াত শোনা,পরস্পর এক সাথে যতটুকু সম্ভব দ্বীন শিক্ষা করা।এভাবে ভালো কাজের জন্য একে অন্যর সঙ্গে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য চেষ্টা করলে একে অপরের কাছে হিরো/হিরোইন হিসেবে গড়ে উঠা যাবে।নিজের বিরুদ্ধে নিজে জেতা যায় না।দাম্পত্য জীবনে নিজের জেতার চিন্তা করা মানে,নিজের নাক কেটে মুখকে বিকৃত করার মত।কারন সেই তো আপনি,আপনিইতো সে।তাই আপনি হারলে তো হারলেনই,আর জিতলেও হারলেন....

আবু হুরাইরা রাঃ হতে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন," একজন মুমিন পুরুষের কখনও উচিত নয় একজন মুমিন নারীকে অবজ্ঞা করা।যদি সে ঐ নারীর চরিত্রের মধ্যে অপছন্দনীয় কিছু খুঁজে পায়,তাহলে তার মধ্যে পছন্দনীয় অনেক বিষয় খুঁজে পাবে" (সহীহ মুসলিম,৩৪৬৯)।

দুজনে মিলে একসাথে আনন্দ করা,দুজনে মিলে কিছুটা হাসি-তামাশা করা।সঙ্গীর প্রতি নয়,বরং তাকে সাথে নিয়ে হাসা।কারন দুজন দুজনের পোশাক,তাই একজনের সম্মান অন্য জনের ই সম্মান।সব সমালোচনা হবে একান্তে কিন্তু প্রশংসা হবে প্রকাশ্যে সবার সামনে।এভাবেই বেড়ে উঠবে পরস্পরের প্রতি ভালবাসা। আর তখন একদা প্রমে পড়িয়াছিলাম এমন নয়,বরং জীবনসঙ্গীর প্রেমে পড়বেন বার বার......