Monday, 9 November 2015

নারী ও পুরুষের পূর্ণাঙ্গতায় পরস্পরের ভূমিকা

আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও নারীকে একে অপরের পোশাক হিসেবে প্রস্তত করেছেন। একজন পুরুষের শুধু পারিবারিক জীবনই নয় বরং তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই তার স্ত্রীর দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। সৎ, মুত্তাকী ও কর্তব্যপরায়ন একজন স্ত্রীর ভূমিকা শুধু স্বামীর গৃহস্থালির চাহিদা বা সন্তান প্রতিপালনের জন্যেই গুরুত্বপূর্ন নয়,বরং স্বামীর আত্মিক পূর্নতা দান এবং তার ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করতে স্ত্রীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আল্লাহর রসুল(স) স্বয়ং তাঁর কল্যানময়ী স্ত্রী উম্মুল মুমিনীন খাদিজা (রা)এর কাছ থেকে তাঁর দুঃসময়ে সান্তনা পেয়েছেন, কাছে পেয়েছেন মমতাময়ী এমন এক নারী চরিত্রকে যিনি শুধু ক্ষনিকের সান্তনাবানী দিয়ে রসুল(স) কে আশ্বস্ত করেই ক্ষান্ত হন নি বরং রসুলের (স) পাশে থেকে এমন এক ভূমিকা পালন করেছেন যার কারনে ইসলামের ইতিহাসে চিরদিনের জন্যে তিনি পরম শ্রদ্ধার আসনে আসীন
হয়েছেন।

অনেককেই দেখা যায় নানাভাবে নারীদের ছোট করার মানসিকতা পোষন করতে। জ্ঞানের স্বল্পতা হোক বা আবেগের উচ্ছ্বলতা, কোন অজুহাতেই নারীদেরকে হেয় করা ইসলাম সমর্থন করে না। আসিয়া, মারইয়াম, ফাতিমা, আয়িশা সহ হাজারো মহিমাময়ী নারী চরিত্র ইসলামের জন্যে এতটাই করেছেন যে আমাদের মত হাজার পুরুষের সারাজীবনের সকল নেক আমল একত্রিত করলেও তাদের ক্ষনিকের সমতূল্য হবে না। শুধু খাদিজা(রা) এর কথা চিন্তা করলেই বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা পাওয়া যাবে। আল্লাহর রসুল(স) তাঁর নবুওয়্যাতের প্রারম্ভে যখন মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ছিলেন এবং অজানা এক ভীতি তাঁকে গ্রাস করে নিয়েছিল ঠিক সেই মুহুর্তে আম্মাজান খাদিজা(রা) এমন এক ভূমিকায় অবতীর্ন হন যার কারনে আল্লাহর রসুল(স) মনোবল ফিরে পান এবং ভীতি থেকে মুক্তি লাভ করেন। ঘটনাটির ব্যাপকতা লক্ষ্য করলে বুঝা যায়, একজন নারীর কারনে মানব-শ্রেষ্ঠ নবী(স) মানসিক পরিতৃপ্তি লাভ করেন। একজন নারীই নবুওয়্যাতের প্রথম ভাগে নবীর(স) পাশে ছিলেন।

সর্বোপরি একজন নারী একই সাথে প্রেমময়ী স্ত্রী ও কল্যানময়ী শুভাকাংখীর ভূমিকায় অবতীর্ন হয়ে নবী(স) এর মনোবল পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে ইসলামের অগ্রযাত্রার পথকে সুগম করেছেন।

নারী ও পুরুষকে একে অপরের পোশাক হিসেবে ঘোষনা করার বিষয়টি মামুলি বা নিতান্ত রুপকার্থে ব্যাবহার্য কোন ঘটনা নয়। আল্লাহ তাআলা তিন জন নারী ছাড়া কোন নারীকেই পূর্নাংগতা দেন নি, তেমনি আম্বিয়া(আ) দের ছাড়া আর কোন পুরষকেও পূর্নাংগ করেন নি। পুরুষদেরকে অসহিষ্ণুতা, ক্রোধ,ক্ষোভ ইত্যাদি দূর্বলতা দিয়ে সাজিয়েছেন।

তেমনি নারীদেরকে শারীরিক দূর্বলতা, অত্যধিক নমনীয়তা, প্রয়োজনাতিরিক্ত স্নেহবোধ ইত্যাদি মানবিক দোষ দিয়ে সাজিয়েছেন। একজন প্রকৃত পুরুষ তার স্ত্রীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো নিয়ে নিজেকে পূর্নাংগ করার চেষ্টা করেন, একই সাথে নিজের সক্ষমতা দিয়ে তার স্ত্রীর দূর্বলতা গুলোকে মুছিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। অপরপক্ষে একজন নারীকে তখনই সার্থক বলা যাবে যখন তিনি আল্লাহপ্রদত্ত স্বীয় অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো দিয়ে স্বামীর দোষত্রুটি মোচন করেন এবং একই সাথে স্বামীর পুরুষসুলভ গুনাবলির আড়ালে আশ্রয় নিয়ে নিজের নারীসুলভ দূর্বলতাগুলোকে যথাসম্ভব ঢেকে রাখতে পারেন। এর অর্থ এমন না যে নারী-পুরুষ একে অপরের স্বকীয়তা হারাবে, বরং এর দ্বারা তারা একে অপরের জন্যে ভালবাসা ও নিরাপত্তার মাধ্যম হবে, হবে নিশ্চিন্ত এক আশ্রয়!

অতএব, নারীবাদীদের তথাকথিত “পুরুষের সমান” হবার মানসিকতা যেমন ফিতরাত থেকে বিচ্ছিন্নতার ফসল তেমনি অতিপুরুষতান্ত্রিক স্বৈরবাদী সমাজ ব্যবস্থাতে নারীদের ক্রমাগত হেয় করার মানসিকতাও নারী-পুরুষের স্বাভাবিক জীবনধারার চিরায়ত গতিকে অস্বীকার করার কারনেই সৃষ্ট। নারী-পুরুষের পারস্পারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে শরীয়াহসম্মত ও প্রকৃত দ্বীনি পরিবেশ গড়ার লক্ষ্যে একমাত্র যুগোপযুগি সমাধান কুরআন ও সুন্নাহতেই নিহিত আছে। তাই দ্বীনে ফেরত আসাতেই সকলের মঙ্গল

No comments:

Post a Comment