ভালোবাসা সৃষ্টি হয় সম্মান থেকে। আমরা এমন কাউকে ভালোবাসতে পারি নাযাকে আমরা সম্মান করি না। তাই, স্বামী-স্ত্রী দু’জনের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার হলো পরস্পরের ভালো গুণগুলোর প্রতি সচেতন দৃষ্টি দেওয়া এবং ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দেওয়া। স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের আয়নার মতন, তারা যা দেখে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করলেও কেবল ভালো বিষয়গুলো স্মৃতিতে ধরে রাখে। যখন নতুন কোনো ছবি এই আয়নার সামনে আসে তখন তা স্মৃতিতে থাকা আগের ভালো ছবিগুলোর সাথে মিলিয়ে ভালোটা রেখে দেয়। একটা গল্প পড়েছিলাম যেখানে বলা হয়েছিল আমাদের বন্ধুদের ভালো গুণাগুলো যেন পাথরের উপরে খোদাই করে রাখি। আর তাদের ভুলগুলো বালিতে লিখি। একটি দীর্ঘদিন ধরে রয়ে যায় এবং অপরটি বাতাসের প্রথম ঝাপটাতেই উড়ে যায়। [বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
রোমান্টিকতার ধারণা থেকে আমরা জানি, প্রেম হচ্ছে শারীরিক আকর্ষণের অন্য একটা নাম মাত্র। সচরাচর এটা খুবই ক্ষণস্থায়ী। আপনি যেহেতু চান আপনার বিয়েটা এর চেয়ে দীর্ঘস্থায়ী হোক, সেহেতু সম্মানবোধকে বেশি গুরুত্ব দিন। এটাই পরবর্তী সময়ে সত্যিকার ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। ‘পড়ে যাওয়া’নয় বরং ‘তৈরি হওয়া’। এর অর্থ, এমন একটি দাম্পত্য সম্পর্ক যেখানে বিয়ের ২৫ বছর পরও যতবার আপনি আপনার সঙ্গীর দিকে তাকাবেন, তত বার নতুন করে তার প্রেমে পড়বেন। ভালোবাসা সৃষ্টি হওয়া মানে চোখের চাহনি, ইশারা আর কিছু বিশেষ শব্দের মিশেলে তৈরি এমন এক নিজস্বভাষা, যে ভাষার ভাষী কেবল আপনারা দুজনা। [বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
যখন ১০মিনিট কথা বলার পর দুজনের কারও আর বলার কিছু থাকে না; বরং একত্রে সময় কাটানো বলতে টিভির সামনে বসে থাকা, অথবা পত্রিকা পড়ায় রূপান্তরিত হয় তখন আপনি ধরে নিতে পারেন আপনাদের দাম্পত্য সম্পর্কে রোগ ঢুকেছে। সুখী দাম্পত্য সম্পর্কে একে অন্যের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য একটা ব্যাকুলতা থাকে। কেবল আনুষ্ঠানিকতা বা দায়িত্ব পালনের জন্য নয়; আপনি বাইরে থেকে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসতে চাইবেন, কারণ আপনার স্ত্রী আপনার অপেক্ষায় প্রহর গুণছে। আপনি বাসায় এসেই আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়ে যাবেন না। পরস্পরকে সময় দেওয়াটা তখন শুধু অভিযোগ থেকে বাঁচার জন্য হবে না; বরং আপনি সত্যিকার অর্থেই তার কাছে থাকতে, তার সান্নিধ্য পেতে ভালোবাসেন—এজন্য সময় দেবেন। [বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
অনুরাগ প্রকাশে কিছু পাগলামি করুন:জীবনসঙ্গীকে ফুল অথবা পছন্দনীয় কিছু উপহার দিন। কিন্তু তা কেবল জন্মদিন বা বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে নয়। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে দিন-তারিখের এসব ছকবাঁধা জিনিস আজকাল আর কাউকে যত্ন করে মনে রাখতে হয় না, যন্ত্রগুলোই আমাদের মনে করিয়ে দেয়। বরং সম্ভব হলেই উপহার দিন। সবসময় যে বড়ো উপহার দিতে হবে এমনও নয়; বরং উপহার দেওয়ার ভাবনাটাই মূল বিষয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন যে তোমরা উপহার দাও, কারণ তা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা বাড়িয়ে দেবে। সুতরাং একে অন্যকে উপহার দিন। যখনআপনি কিছু দিনের জন্য দূরে থাকেন, অথবা কদিন কাজে ডুবে থাকার কারণে মানসিকভাবে দূরত্ব সৃষ্টি হয়—তখন উপহার দারুণ কাজ করে। উপহার সুন্দর দাম্পত্য জীবনকে জুড়ে রাখে আঠার মতো। আর হ্যাঁ, উপহারটি আপনার সঙ্গীকে একান্তে দিবেন। উপহারটিকে রেপিং পেপারেমুড়িয়ে, রঙিন ফিতে দিয়ে বেঁধে, সুগন্ধী লাগিয়ে একগুচ্ছ ফুলসহ তার হাতে তুলে দিন। ঘটনাটিকে স্মরণীয়, বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ও সৃজনশীল করুন। মনে রাখবেন, উপহারের বস্তুটি কিন্তু এখানে মুখ্য নয়, এখানে মূল হলো একটি স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়া। উপহারটি এমন ব্যাগ ভরা কিছু হওয়ারদরকার নেই—যা সবার সামনে বের করে দেবেন। বরং এটা এমন কিছু হবে যা কেবল সে-ই পাবে। কোনো উপলক্ষ করে বা ঘটা করে কিছু করতে যাবেন না; বরংতাকে এমন সময় এমন কিছু দিন যা সে তখন আশা করেনি। উপহারটিই আপনার সঙ্গীর বিশেষত্ব প্রকাশ করে বলবে,‘তুমি আমার বিশেষ’ একজন। একই ঘটনা ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
মনে রাখবেন, ছেলেরাও কিন্তু উপহার পছন্দ করে; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের চেয়েও বেশি। তাদেরকেও উদার মন নিয়ে উপহার দিন।জীবনসঙ্গীকে সময় দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাকে বঞ্চিত করে বন্ধুদের সাথে অকারণ আড্ডাবাজিতে সময় নষ্ট করা মোটেই উচিত নয়। এমন কিছু বিষয় তৈরি করে নেওয়া দরকার যা উভয়েরই পছন্দের। একে অন্যের কাজের মাঝে আনন্দ পাওয়ার বিষয়টা শিখে নেওয়া উচিত। সবধরনের ভালো কাজেই পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। কোনো বিষয় আপনার পছন্দ না হলে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন। তবে তা অবশ্যই হতে হবে একান্তে; আগ্রহ ও যত্নের সাথে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনো প্রতিরক্ষা প্রাচীর গড়ে তোলা ঠিক নয়। এ সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া উচিত পরস্পরের প্রতি গভীর আস্থা ও বিশ্বাস। আবেগ অনুভূতির বিষয়ে একে অন্যের প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়া আবশ্যক। [বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর]
আমাদের সমাজের পরিবারগুলো সুন্দরহোক, শান্তিতে ভরে উঠুক প্রতিটি পরিবার। ‘বিয়ে : স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর’ বইটি হয়ত এই অশান্ত সময়ে পারিবারিক জীবনে গুণগত পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে সমাজের মানুষদেরকে......
No comments:
Post a Comment