একটা সময়ের কথা মনে পড়ে,যখন ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে মাটির সোঁদাগন্ধ নাকে নিয়ে ভাললাগার অদ্ভুদ অনুরননে অস্থির হয়েছি।বুকের মাঝে জেগে উঠা শূন্যতা আর প্রকৃতির সীমাহীন সৌন্দর্যে মুগ্ধমাতাল মনে মাঝে মাঝে চিন্তা জাগিয়ে তুলতো। পিচঢালা পথে হাঁটার বেলায় স্নিগ্ধ বাতাসের সংস্পর্শে মনে হয়,এই অপার ভাললাগা কাউকে আমি বুঝাতে পারব না,পারব না বছরের পর বছর এই স্নিগ্ধ হাওয়া উপভোগ করতে।আমিও নশ্বর,আমার যাওয়ার বেলাও নির্ধারিত।এই ভাললাগা,ভালবাসা,উদাস মন সবতো ক্ষনিকের জন্য।অদ্ভুদ এই জীবন,এই ছোট্ট জীবনে আল্লাহ সুবহানুতা'আলার অকল্পনীয় অনুপম,নিঁখুত সৌন্দর্যের একটা ছোট্ট সৃষ্টি ও উপহার,আমাদের এই অনুভূতিগুলো। অনিন্দ্য সুন্দর সেই ভালোলাগার বাগানে বৃষ্টি বিলাস তো আরো সুন্দর।
এ ভাবনাগুলো মনে মাঝে মধ্যেই উঁকি দেয়।এই ছোট্ট জীবনের অর্থ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি,চেষ্টা করি জীবনের সফলতা কিংবা বিফলতার হিসাব মেলাতে।প্রতিটি মানুষই এক একটা যোদ্ধা আর প্রত্যেকের জীবনে রয়েছে,দুঃখ-কষ্ট-বেদনার মহাকাব্য।আমরা কমই ভাবি যে,আমাদের জন্য অন্য কেউ অসুবিধায় পড়ল কি না? এই ছোট্ট জীবনে অনেক কিছুই দেখছি।শৈশবে বেড়ে ওঠা গ্রামে।সেখান থেকে প্রাথমিক,মাধ্যমিক আর উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে আজ মফস্বল থেকে শহরে অবস্থান।এই সময়টাতে অনেক কিছুই ঘটছে জীবনে আর আশেপাশের পরিবেশে।তথাকথিত এই আধুনিক জীবনের সাথে এখনও নিজেকে তাল মিলিয়ে চলতে শিখাই নি এবং তাল মেলানোর কোন ইচ্ছাও নেই।কারন অনেক কেই তো দেখেছি,জীবনটাকে জটিল,পাপময় করতে,রাগ-ক্ষোভ-হতাশার স্ফূরন ঘটাতে ফিরে ফিরে রোমিও,মজনু,ফরহাদ হতে চেয়েছিল।কিন্তু ফলাফল কি আশানূরুপ হয়েছে? না।মোবাইল ফোন,ইন্টারনেট থেকে দূরে রেখে ঘরের আলো নিভিয়ে নিজেকে একটুখানি সময় দিলে,হিসাবটা বের হয়ে আসে।এই একটা দেহ,একটা প্রান কি শুধু কোন নারীর পেছনে ছোটার জন্য? মা-বাবা,ভাই-বোন এর কষ্টার্জিত জীবন,রাস্তার পাশের কষ্টে থাকা মানুষগুলো কি কখনও আমাদের ভাবায় না? এই বাস্তব কথাগুলো অনেক মানুষের সাথে মিলে যাবে।
যেদিন আমি,আপনি হব সুন্দর চরিত্রের উদার মনের মানুষ,সেদিন বোঝা যাবে ভালো কাজের ফলাফল কতটা আনন্দদায়ক। তথাকথিত আধুনিকতার যুগে আবার তথাকথিত দারুন স্মার্ট ছেলেও রয়েছে যারা আধুনিকতার সংজ্ঞা ভুলে গেছে,ভুলে গেছে সততা আর নৈতিকতার মূল্য।আধুনিকতার এই নষ্ট স্রোতে নিজেও ভেসে চলছে খরকুটোর মত আবার পরিবেশটাকেও করছে নিজেদের জন্য অনুপযোগী।মস্তিষ্ক কতটা নিচে নেমে গেলে আধুনিকতার বুলি ছড়িয়ে ধুমপানকেও স্মার্টনেসের উপকরন ভাবা যায়।আক্ষেপ হয় ঐ ছেলেটির জন্য,যে কিছু দিন আগেও ছিল একজন সহজ-সরল ভালো ছেলে।সেই আজ নেশা আর নারীর পেছনে ছুটে পিতার কষ্টার্জিত টাকা খরচ করছে।যে পিতা তার ছেলেকে একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখতে চেয়েছিল,সেই ছেলেই তার পিতাকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে নিজেকে ঠেলে দিয়েছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
আবার আক্ষেপ হয় ঐ মেয়েটির জন্য যে কিছুদিন আগেও ছিল ভদ্র আর সহজ সরলা।এই পরিবেশের নষ্ট সংস্কৃতির করাল গ্রাসে পড়ে বার বার প্রতারিত হয়ে জীবনের শেষ সম্বলটুকুও হারিয়েছে। পশ্চিমা এই সংস্কৃতি আমাদের জন্য কত অশ্লীলতার পথ প্রসারিত করেছে।জিজ্ঞাসা করুন ঐ মাকে, যার ছেলে প্রেমের মূল্য দিতে গিয়ে জলে ঝাঁপ দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে,জিজ্ঞাসা করুন ঐ পিতাকে যার পরিশ্রমের টাকায় তিলে তিলে বেড়ে উঠা মেয়েটি পালিয়ে গেছে স্বল্প পরিচিত কোন ছেলের সাথে।প্রশ্ন করুন ঐ মেয়েকে যে অবৈধ সম্পর্কের সন্তান গর্ভে নিয়ে বিলাপ করছে পালিয়ে যাওয়া ছেলেটির জন্য।এগুলো দেখলেই বোঝা যায়, ফলাফলটা কি? শূন্য।সৎ ও পবিত্র চরিত্রের মূল্য অনেক...
সবকিছুর একটা শ্রেষ্ঠ সময় থাকে,যে সময়ে সেটা সবচেয়ে সুন্দরভাবে পূর্নরুপে বিকশিত হয়।যেমনঃ নাইট কুইন রাতের বেলায় পূর্নরুপে সুশোভিত হয়।আবার চাঁদের কথা বলা যায়। চাঁদপূর্ন আলোতে বিকশিত হয় পূর্নিমার রাতে।চাঁদের জীবনকাল এক মাস হলে মাসের ১৪-১৫ তারিখ হল চাঁদের পূর্ন যৌবন,এসময় তার স্নিগ্ধ আলোয় ভেসে যায় বিশ্ব চরাচর।অন্য দিন গুলিতে আলো থাকে কিন্তু তা পূর্নিমার আলোর মত হয় না।সৃষ্টির মধ্যে এমন অনেক দ্যোতনা খুঁজে পাওয়া যাবে,একটি নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলে সেটা ফিকে হয়ে যায়।সঠিক সময়ের কাজগুলোর মূল্য অনেক।মানুষের একট নির্দিষ্ট বয়সকাল থাকে,সেটা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়, যে সময়ে উজ্জ্বল আলোর মত বিকশিত হওয়া বা অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ থাকে।এ সময়টাতে সে খুব সহজে নিজেকে মেলে ধরে আর নিজেকে মেলে ধরতে পারলেই ভিতরের সুপ্ত প্রতিভাগুলো আরো বিকশিত হয়,ঠিক ফুলের পাঁপড়ির মত।কুড়ির শক্ত খোলসটা হচ্ছে ভয়।তাই আমাদের করনীয় হল,কুঁড়ির শক্ত আবরনটাকে দুর্বল করে,পাঁপড়ি গুলোকে পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ করে দেওয়া।আসলে মানুষের প্রকৃত সৌন্দর্য কোথায়? চেহারা সুন্দর হলেই মানুষ সুন্দর হয় না।একজন মানুষের সৌন্দর্য তার হৃদয়ে,চাহনিতে আর পরিশ্রম ভরা প্রতিটি কাজের আঁচড়ে এবং তার কথা ও আন্তরিকতায়।মেয়েদের ক্ষেত্রে যে বিষয়টি আরো ভয়ংকর এ সময় তারা সিনেমা,নাটক দেখে অনেক বেশি আবেগ দিয়ে আর সেভাবে স্বপ্নের জাল বুনে।দেখা যায় সিনেমা শেষে গরিব নায়কটিও ধনী হয়ে যায়।কিন্তু জীবন তো আর দুই বা তিন ঘন্টার সিনেমা নয়।
বাস্তব জগতে আধুনিকতার দোহাই দিয়ে অনেক কিছুই হচ্ছে,যা কারো দৃষ্টিগোচর হয় আবার কারো হয় না।সমাজে আমরা একটা খারাপ সময় অতিক্রম করছি,যেখানে খারাপ নাটক,সিনেমা, উপন্যাসের অভাব নেই,অভাব নেই খারাপ সাহিত্যের।যে সমাজে নোংরামির জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছে আলু আর পটলের মত,আর তা সহজলভ্য করে দেওয়া হয়েছে এক ক্লিকের মধ্যে এবং সততার পথ যেখানে রুদ্ধ।আসলে শিক্ষিত হওয়া আর সুশিক্ষিত হওয়া এক নয়।প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জন করে সহজেই শিক্ষিত পদবী নেয়া যায় কিন্তু চারিত্রিক গুনাগুন অর্জনের বিষয়টি মানুষের সুশিক্ষিত হওয়ার দিকটিকে স্পষ্ট করে তুলে।সমাজে অনেক উচ্চ ডিগ্রীধারি লোক আছে যারা অনেক শিক্ষিত,তারাও বেরিয়ে আসতে পারে নি এই নোংরামি থেকে বরং তারা এটাকে ট্রেডিশান মনে করে লালন করছে।কি লাভ হবে এত উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে,যেখানে নিজেকেই গড়তে পারলাম না।সমাজে যে তার চরিত্রকে ভালোর রঙে রাঙাতে চায় এবং বেঁচে থাকতে চায় এই তথাকথিত আধুনিকতার নোংরামি থেকে,তাদের কে আনস্মার্ট,বোকা আর পশ্চাৎপদ বলে ট্যাগ পেতে হয়।তবে আমি বলব,ভালো ও সততার মূল্য আছে।
মানব জীবনে বাস্তবতা কিছু ক্ষেত্রে অনেক কঠিন।জীবনে চলতে গেলে অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিতে হয়।বাঁধার পাহাড় মানুষের সামনে উপস্থিত হলে কেউ তা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করে আবার কেউ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে।এটা মোকাবেলা করতে যতটা দ্বিধান্বিত হয় তার চেয়ে বেশি সংকোচে পড়ে।সাফল্যের মুখ দর্শনে জোয়ার ভাটার মত এ মনে আনন্দ আসে।বাস্তবতা আর স্বপ্ন,দুটো স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বিদ্যমান।রাতে চোখ বন্ধ করে যা দেখা হয় তা সত্যিকারের স্বপ্ন নয় বরং স্বপ্নতো সেটাই যাকে বাস্তবতায় পরিনত করার আকাঙ্খা রাতে ঘুমাতে দেবে না।
এত সব বাধা বিপত্তির মাঝেও আমরা স্বপ্ন দেখি,আশায় বুক বাঁধি।আমাদের এই স্বপ্ন কোন ক্ষুদ্র কিছু নয়।এই স্বপ্নের মাধ্যমেই আমরা চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হব,ইনশাআল্লাহ। আধুনিকতার এই মন্দ দিক আর মানুষের বাঁচা-মরা এখনও আমাকে ভাবিয়ে তুলে,ভাবিয়ে তুলে লাগামহীন এই তরুন সমাজকে। তাই তো এই নোংরামি থেকে বাঁচতে, আমি স্বপ্ন দেখি একটা সুন্দর জীবনের-
No comments:
Post a Comment