Saturday, 30 January 2016

দ্বীনদার Spouse নির্বাচনের গুরুত্ব

সমস্যাটা হলো, আমাদের প্রাকটিসিং ভাই-বোনেরা বিয়ের জন্য পাত্র-পাত্রী খুজে পায়না।অনেক ক্ষেত্রেই উভয়পক্ষের এত এত আকাশচুম্বী দাবীর প্রেক্ষিতে দ্বীন উপেক্ষিত থেকে যায়।

তো যা বলসিলাম, আমাদের এরকম করুণ অবস্থা দেখে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের অনেকে পরামর্শ দেয়, আপাতত মডারেটদের মধ্যেই অপেক্ষাকৃত ভদ্র ছেলে-মেয়েদেরকে আমরা বেছে নিতে পারি। বিয়ের পর বুঝিয়ে সুঝিয়ে তাকে দ্বীনের পথে আনতে পারলে (!!!) আমরা অনেক সওয়াব পাবো।

এখন আমরা সে বিষয়টাকে পর্যালোচনা করব-

তারা কি আল্লাহ্'র এ ওয়াদার কথা জানেনা?
"দুশ্চরিত্রা নারী দুশ্চরিত্র পুরুষের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষ দুশ্চরিত্রা নারীর জন্যে।সচ্চরিত্রা নারী সচ্চরিত্র পুরুষের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষ সচ্চরিত্রা নারীর জন্যে।তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। - সুরা আন-নুর : ২৬

যার যার চরিত্র বা আখলাকের ব্যাপারে তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। সে নিজের জন্য কি রকম স্পাউস চয়েস করবে সেটা নির্ভর করবে তার ব্যাক্তচরিত্র ও রুচিশীলতার উপর। এতে অন্য কারও হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই।আপনি আপনার পছন্দমত একজনকে চয়েস করতেই পারেন, কিন্তু অন্যের পছন্দকে নিজের বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে বিচার করা নিতান্তই অনধিকার চর্চা হয়ে যায় না ভাই?

এটা মেনে নেয়া কষ্টকর, এখন যে দ্বীন প্রাকটিসের মূল্য বুঝেনা তাকে একজন দ্বীনদার ব্যাক্তি কিভাবে বেছে নিতে পারেন!
পরে যে কেউ আরো ভালো প্রাকটিসিং হয়ে যেতে পারে ঠিক [এ
সম্ভাবনা সবার ক্ষেত্রেই খাটে] কিন্তু নাও তো হতে পারে এ নিশ্চয়তা কে দিবে? এখন বিয়ের পর যদি সে তার স্পাউসের মতামতকে সম্মান না জানায়, না বুঝে যদি গোয়ার্তুমি করে ? তখন অনেকক্ষেত্রে ছাড়াছাড়ির পর্যায়ে চলে যেতে পারে।অধিকন্তু, এ ধরনের কল্পনা প্রসূত মতামত যারা দ্বীন বোঝেনা, মানেনা।শুধুমাত্র তারাই প্রসব করতে পারে। যিনি দ্বীনকে ভালবাসেন, দ্বীন মেনে চলতে চান, দ্বীনদার স্পাউসের গুরুত্ব বোঝেন তিনি কি তার মত যে এরুপ নয়? যে জানে আর যে জানেনা সে কি সমান হতে পারে,"সমান নয় অন্ধকার এবং আলো … "- সুরা ফাতির : ২০
সো তাঁরা স্বাভাবিকভাবেই একজন দ্বীনদার স্পাউসের জন্য বেকারার থাকবেন, যতই দেরী হোকনা কেন। কেননা, তিনি জানেন তার রব তাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন এবং ধৈর্য্যের সাথে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারলে তার জন্য অশেষ নি‘আমত অপেক্ষা করে আছে। দুনিয়াতে যদি একজন স্পাউস নাও মেলে তবে আখিরাতে একদম মিস হবেনা ইনশা আল্লাহ্।

আর, উপরের আয়াত তো দেখলেনই। আমাদের রব আমাদেরকে এব্যাপারে ওয়াদা করেছেন। আমরা কিভাবে নিরাশ হতে পারি? যেখানে আল্লাহ্ নিজে বলেছেন"…… নিশ্চয়ই, আল্লাহ্'র ওয়াদা সত্য। সুতরাং, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে এবং প্রতারক শয়তান যেন তোমাদেরকে আল্লাহ্'র ব্যাপারে প্রতারিত করতে না পারে। - সুরা লুকমান : ৩৩

একবার ভাবুন, যে ছেলে/ মেয়ে টা জীবনে কোনদিন দ্বীন সিরিয়াসভাবে মানেনি বা দ্বীন থেকে গাফেল হয়ে গেছে, আল্লাহ্'র ইবাদাহ যথাযথরুপে করেনা, যে ব্যক্তি জানেই না ইসলামে বিয়ে একটা সুন্নাহ্ তথা গুরুত্বপুর্ণ ইবাদাহ। সে কিভাবে বিয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস থাকতে পারে? তার কাছে বিয়ে সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা হিসেবে একটি সামাজিক অনুষ্ঠান অতঃপর সংগঠন ছাড়া কিছুই নয়। সে কিভাবে বুঝবে ইবাদাহ হিসেবে বিয়ের গুরুত্ব?

একজন দ্বীনদার স্ত্রীর গুরুত্ব বুঝা যায় নিম্নোক্ত হাদীস দুটো দ্বারা,
রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলছেন, “এই দুনিয়া সম্পদে পরিপুর্ন, তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম সম্পদ হলো নেককার স্ত্রী” - সুনানে ইবনে মাজাহ

ইমাম আল-হাকীম হযরত আনাস (রাঃ) থেকে মারফু সুত্রে বর্ণনা করেছেন, “আল্লাহ্ যাকে একজন দ্বীনদার স্ত্রী দ্বারা পুরস্কৃত করেছেন, এর অর্থ তিনি তাকে দ্বীনের অর্ধেক দ্বারা সাহায্য করেছেন। সুতরাং দ্বীনের বাকী অর্ধেক পূরণে সে যেন আল্লাহ্'র
ব্যাপারে তাক্বওয়া অবলম্বন করে।” - মুস্তাদ'রাকে হাকীম

এখন স্পাউস যদি দ্বীনদার না হয় তবে দ্বীনের পার্সপেক্টিভ থেকে সে অপরজনের প্রতি হক্বসমূহ জানবেনা এবং নিজের স্বার্থের ভিত্তিতে সবকিছু বিচার করবএখন স্পাউস যদি দ্বীনদার না হয় তবে দ্বীনের পার্সপেক্টিভ থেকে সে অপরজনের প্রতি হক্বসমূহ জানবেনা এবং নিজের স্বার্থের ভিত্তিতে সবকিছু বিচার করবে। বলবেন ভালবাসা ? হাহ্, এসব সস্তা ভালবাসা স্বার্থের কাছে উড়ো হাওয়া। প্রবাদ আছেনা, “অভাব যখন দরজা দিয়ে ঢুকে, ভালবাসা তখন দরজা দিয়ে পালায়।”যা সেক্যুলারলি পরিক্ষিত হয়।

সর্বোপরি, যে ব্যক্তি সৃষ্টিকর্তা তথা আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি বিশ্বস্ত নয় সে আপনার কাছে কিভাবে বিশ্বস্ত প্রমাণিত হবে ভাই/বোন! সে তার এত দীর্ঘকালের সেক্যুলারি জ্ঞান (টিনের চশমার ন্যায়) এত সহজে ছেড়ে দিবে ভেবেছেন ? ভূল সম্পূর্ণ ভূল [ অবশ্য তওবাহ করলে ভিন্ন কথা ] আল্লাহ্ চাইলে সবই হয় ভাই, কিন্তু আল্লাহ্ কি চান সেটাতো তিনি ক্বুরআনেই বলে দিয়েছেন। আর,রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) স্বয়ং আমাদের নির্দেশ দিয়ে গেছেন …

হযরত মূসা’দ্দাদ (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত
… রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন, ৪টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে বিয়ে করো - ১। দ্বীনদারিত্ব ২। সৌন্দর্য ৩। বংশ-মর্যাদা ৪। ধন-সম্পদ
সুতরাং,তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে। অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। - সহীহ্ বুখারি, বিবাহ অধ্যায় : ৪৭১৯

সুবহানাল্লাহ্, এত স্পষ্ট নির্দেশ থাকার পরও আমরা যদি নিতান্তই খাহেশের অনুসরন করি বিভিন্ন অজুহাতে! ওয়াল্লাহি, আমরা কখনও পারিবারিক জীবনে সফল হতে পারবোনা। আর এটা আমাদের জীবনকেও তিক্ত করে দেবে। নিশ্চয়ই, সফলতা দানের মালিক একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু তা'আলা। [ এই সাফলতা বলতে কিন্তু বাড়ি, গাড়ি, সামাজিক প্রতিপত্তি, সন্তানদের সেরা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো এসব বুঝানো হয়নি ]

আল্লাহ্ বলেন,"যে কেউ দুনিয়ার কল্যাণ কামনা করবে, সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ আল্লাহ্'র নিকটেই রয়েছে। আর আল্লাহ্ সব কিছু শোনেন ও দেখেন।- সুরা আন-নিসা : ১৩৪।

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
“অন্ধকার রাতের মত ফিতনা ছড়িয়ে পড়ার পুর্বেই তোমরা নেক আমলের প্রতি অগ্রসর হও। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফির হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফির হয়ে যাবে। দুনিয়ার তুচ্ছ লাভের বিনিময়ে মানুষ তার দ্বীনকে বিক্রি করে বসবে।”- সহীহ্ বুখারী

হাদীস সত্যই বলেছে, আজকাল এরকম অন্ধকার রাতের মতো বিস্তৃত ফিতনাহের মধ্যে আমরা বাস করছি, অন্ধকার রাতে যেমন পরিচিত রাস্তায়ও চলতে কষ্ট হয় তেমনি আমরা দ্বীনদার/প্রাকটিসিং হওয়া সত্বেও এরকম ফিতনাহের মধ্যে হরদম পড়তে হয়, অনেক সময় তো নিজেই ফিতনাহের ক্রীড়নক হয়ে পড়ি আমরা। আল্লাহ্, রহম করো!

তো বুঝুন ভাই/বোন, এরকম ফিতনাহর যামানায় একজন দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ বা নিতান্তই কম জানা বা অনাগ্রহী স্পাউস নিয়ে আমরা কিরকম নিদারুন ফিতনাহর মধ্যে পড়বো! উপরন্তু এই বিয়েটাই একটা ফিতনাহ হয়ে পড়বে সেই একপাক্ষীক দ্বীনি ভাই/বোনের জন্যে যার ফলাফল পরবর্তিতে খুব একটা ভালো দিকে মোড় নেয়ার সম্ভাবনা খুবই কম!!

“এই সমাজে আমাদের দ্বীনি ভাইদের মত দুর্বল আত্মার একটা ছেলেও যখন এমন ভয়াবহতা থেকে মুক্ত থাকতে পারে,এমন কেউ তাদের জন্য আছেই যে আমাদের মতন করেই আমার মত কারো জন্য অপেক্ষা করছে। সমস্ত মেয়েদের এক করে দিলে হবেনা কেননা আমি আমার বোনদের মত অনেক মুসলিমাহ বোনদের চিনি যারা অসম্ভব সুন্দর অন্তকরণকে ধারণ করে। যাদের চোখে পৃথিবী কেবলই কেনাকানা, গয়নাগাটি, সাজগোজ আর গাড়ি-বাড়ির না। তাদের কাছে এই জীবনটার একটা আলাদা অর্থ আছে। তাদের কাছে ব্র্যাডপিট-নিকোল কিডম্যান, শাহরুখ-গৌরি, প্রভা রাজিবরা দাম্পত্য জীবনের আইকন না। তাদের কাছে আইডল হলো ফাতিমা, আয়িশা, আসিয়া, খাদিজা নামের কিছু পবিত্র আত্মা।” -

সো, প্র্যাকটিসিং দ্বীনি ভাই-বোনেরা! আল্লাহ্'র উপর তাওয়াক্কুল রেখে দ্বীনদার স্পাউস খুজুন। দেরী হলেও ধৈর্য্যধারন করুন। হতে পারে, আল্লাহ্ আপনার জন্য আপনারই মতো একজনকে তৈরী করছেন বা আপনাকে তাঁর জন্য। আর আল্লাহ্'র প্রিয় বান্দাহ হওয়ার চেষ্টা করুন। সকল দুঃখ-কষ্টের জন্য তার নিকটেই প্রার্থনা করুন।

নিশ্চয়ই তিনি মহাদাতা আল-ওয়াহ'হাব …

No comments:

Post a Comment