সুখী দাম্পত্য জীবন (পর্ব ১)

আপনারা জানতে চান যে, কীভাবে সংসারে শান্তি আসবে, ঘর শান্ত থাকবে এবং দাম্পত্য জীবন সুখের হবে? আমি অভিজ্ঞতালব্ধ সূক্ষ্ম কিছু কথা আপনাদের বলব। আপনারা চাইলে আমার হেকমত ও অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হতে পারেন।

এখানে কয়েকটি ব্যবস্থাপত্র দেয়া হবে, যা সহজপাচ্য ও বহুল ফায়দাজনক। এতে আপনাদের এই সমস্যার রয়েছে সমাধান।

এক

বিয়ের শুরুটা হয় প্রেম ও হৃদয়াবেগ দিয়ে। আর প্রেমের শুরুটা মিষ্ট হলেও এর সমাপ্তি তিক্ত। প্রেম মানুষকে অন্ধ করে দেয়, তাকে বধির করে রাখে এবং সকল দোষত্রুটি রাখে আড়ালে। আর যখনই আড়াল ভেঙে যায় (একদিন না একদিন তা ভাঙবেই) তখনই লুকানো দোষত্রুটি বের হতে শুরু করে, গোপন করা বিষয়গুলো প্রকাশ পেয়ে যায়। সেইসাথে স্বামী-স্ত্রীও হারায় প্রেমের স্বাদ, এর দেখা তারা আর পায় না।

মধুচন্দ্রিমার দিনগুলি খতম হলেই শুরু হয় তিক্ততা। স্বামী-স্ত্রী বাকিটা জীবন এই তিক্ততা নিয়েই কাটিয়ে দেয়। 

এর সমাধান হলো— স্বামী-স্ত্রী (একটি নির্দিষ্ট সময় পরে) আর “প্রেমের’ আশা করবে না। 

প্রেমের বয়স গোলাপের মতো। যা খুবই সংক্ষিপ্ত সময় বাঁচে। বিয়ের দশ বছর পরও যে প্রেম খুঁজবে, সে যেন কবরে থাকা ঝুরঝুরে হারগোড়ের মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরি রমনী তালাশ করছে। বিয়ের শুরু জীবনের মতো প্রেম থাকবে না এবং তা খুঁজবেও না। কিন্তু তাদের মাঝে থাকবে প্রীতি-সৌহার্দ্য-নিষ্ঠা ও বন্ধুসুলভ ভালোবাসা। 

দুই

কিছু পুরুষরা বন্ধুদের যতটা ছাড় দেয় স্ত্রীদের ততটা দেয় না, বন্ধুদের যত ঝামেলা সহ্য করে স্ত্রীদের ততটা করে না এবং বন্ধুদের যতটা সুযোগ দেয় স্ত্রীদের ততটা দেয় না। এর পিছনে কারণ, বোধকরি; এই আজগুবি কথাটি যে, পুরুষ ও নারী অভিন্ন প্রকৃতির সৃষ্টি। এই কথার প্রভাবে ‍পুরুষ চায় নারী তার মতো চিন্তা করবে আর নারী কামনা করে পুরুষ তার হৃদয়াবেগ অনুভব করবে।

বস্তুত মানুষ হচ্ছে দীর্ঘ সোজা রাস্তার মতো, যেখানে অল্প-স্বল্প আঁকাবাঁকা আছে। যত দূর থেকে এই রাস্তা দেখা হবে, একে তত সমান ও সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হবে, কেননা দূরত্বের কারণে ছোটখাটো আঁকাবাঁকা বোঝা যায় না। অন্যদিকে এই পথের যত নিকটে আসা হবে, ততই তার বক্রতা চোখে ধরা পড়বে (অনুরূপ আপনি যতদূর থেকে মানুষের সাথে মিশবেন, ততই তাদের বক্রতাহীন মনে হবে। অন্যদিকে যতই তাদের কাছাকাছি যাবেন, ততই তাদের বক্রতা ও ত্রুটিগুলো প্রকাশ পেতে থাকবে- অনুবাদক)

তো আপনি বিশ বছর ধরে এক বন্ধুর সাথে চলাফেরা করছেন, কিন্তু তার মাঝে ও আপনার মাঝে কোনোই মতোবিরোধ দেখেননি। তো এবার মাত্র একটি সপ্তাহ তার সাথে কাটান—তার সাথে খাবেন-দাবেন-থাকবেন— তখন আপনি এই এক সপ্তাহর মধ্যেই তার মধ্যে এমন সব জিনিস দেখতে পাবেন যা বিগত বিশ বছরেও দেখেননি। অবশেষে আপনি তাকে অপছন্দ ও নিন্দা করতে থাকবেন, যেখানে আপনি তাকে ভালোবাসতেন এবং প্রাধান্য দিতেন।

(সুতরাং স্বামী-স্ত্রী যখন একই সাথে বসবাস শুরু করবে তখন তাদের সামনে উভয়ের দুর্বলতাগুলো দিন দিন প্রকাশ পেতে থাকবে৷ যেটা বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে সচরাচর ঘটে না৷ তাই স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই ছাড় দিতে হবে উভয়কে৷ মনে রাখতে হবে দোষ-ত্রুটি মিলিয়েই মানুষ৷ 

অন্যদিকে মেয়েদের হৃদয়াবেগ থাকে বেশি৷ তাই রুক্ষ আচরণ করে তাদের বোঝানো দুস্কর৷ বোঝার বদলে উল্টো তারা কষ্ট পাবে৷ মেয়েদের অভিমানও বেশি৷ স্বামীদের তাই হতে হবে ধৈর্যশীল৷ স্বামী যদি ভাবে আমি বুঝলে সে বুঝবে না কেনো, তবেই গোল বাঁধবে সংসারে৷ স্বামীরা বন্ধুদের মাধ্যমে আর স্ত্রীরা বান্ধবীদের মাধ্যমে প্রবাভিত ও প্ররোচিত হওয়াও সুখী দাম্পত্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর— অনুবাদ৷)

কসম খোদার, আল্লাহ তায়ালা কোনো দুজন ব্যক্তিকেই—হোক বন্ধু বা স্বামী-স্ত্রী— অভিন্ন প্রকৃতি দিয়ে তৈরী করেননি।

চলবে....... ইনশাআল্লাহ৷

সূত্র: ফি সাবিলিল ইসলাহি (পৃষ্ঠা ২০১-২০২)।

মূলঃ আলী তানতাবী (রহঃ)

অনুবাদঃ ইমরান হোসাইন