ইস্তিগফারঃ দুয়া কবুলের অব্যর্থ হাতিয়ার

হাদিসে এসেছে, ‘‘যে ব্যক্তি নিজ আমলনামা দেখে খুশি হতে চায়, সে যেন বেশি করে ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে।’’ [সহিহুল জামি’, ৫৯৫৫; সিলসিলা সহিহাহ, ২২৯৯]

অন্য হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘সুসংবাদ তার জন্য, যে তার আমলনামায় অনেক বেশি ইস্তিগফার পেয়েছে।’’ [সহিহুল জামি’, ৩৯৩০]

ইস্তিগফার করা যায় তিন ভাবে:

(১) জিহ্বার মাধ্যমে ইস্তিগফার: শুধু জিহ্বার মাধ্যমে যে ইস্তিগফার করা হয়, সেটির মর্যাদা কম। তবে, তা ইস্তিগফার হিসেবে গণ্য হবে।

(২) অন্তরের মাধ্যমে ইস্তিগফার: এটি আল্লাহর নিকট উঁচু মর্যাদার ইস্তিগফার। অন্তরে গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর নিকট মনে মনে ক্ষমা চাওয়া।

(৩) অন্তর ও জিহ্বার সমন্বয়ে ইস্তিগফার: এভাবে ইস্তিগফার করা সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট। এতে অন্তরে গুনাহের জন্য অনুশোচনা করা হয় ও মুখ দিয়ে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়।

ইস্তিগফারের সময় তিনটি বিষয় মনে রাখুন: (রামি হানাফি মাহমূদের আরবি প্রবন্ধ থেকে ভাবানুবাদ)

1️⃣ আপনি মহাশক্তিশালী সত্তা আল্লাহ্ তা‘আলার অবাধ্যতা করেছেন, অথচ আপনি অতি ক্ষুদ্র এক সৃষ্টি।

2️⃣ আপনি আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত (যেমন: চোখ, কান, হাত, পা, সম্পদ ইত্যাদি) ব্যবহার করে আল্লাহরই অবাধ্যতা করেছেন। এটি অনেক বড় অকৃতজ্ঞতা।

3️⃣ আপনি জানতেন, গুনাহ করে আল্লাহর অবাধ্যতা করছেন। তিনি আপনাকে দেখছেন, এটা জানার পরও আপনি তার অবাধ্যতা করেছেন, কোনো পরোয়া করেননি। মানুষের সামনে আপনি গুনাহ করতে লজ্জাবোধ করেন অথচ আল্লাহকে লজ্জা করেননি।

এই তিনটি বিষয় মাথায় রেখে যখন ইস্তিগফার করা হবে, তখন সেই ইস্তিগফারে ব্যাকুলতা থাকবে এবং আল্লাহর কাছে কবুলের সম্ভাবনা বাড়বে ইনশাআল্লাহ্। আর, অবশ্যই নিজের খাবার ও পোষাক হালাল হতে হবে এবং কবুল হওয়ার দৃঢ় বিশ্বাস রেখে ইস্তিগফার করতে হবে।

❤️ ইস্তিগফারের উপকারিতা ❤️

━━━━ • ✿ • ━━━━ 

✅ অধিক ইস্তিগফারের কারণে প্রচুর বর্ষণ হয়। বাগান ও শস্যে ভালো ফসল হয়। নদী-নালা থাকে জীবন্ত।

✅ ইস্তিগফারকারীকে আল্লাহ উত্তম সন্তান, সম্পদ ও জীবিকার দ্বারা সম্মানিত করেন।

✅ দ্বীন পালন সহজ হয়। এবং কর্মজীবন হয় সুখের।

✅ আল্লাহ ও বান্দার মাঝে যে দূরত্ব আছে, তা ঘুচে যায়।

✅ ইস্তিগফারকারীর কাছে দুনিয়াকে খুব তুচ্ছ করে দেয়া হয়৷

✅ মানব ও জ্বিন শয়তান থেকে তাকে হিফাযত করা হয়৷

✅ দীন ও ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করা যায়।

✅ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়।

✅ বিচক্ষণতা ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়।

✅ দুশ্চিন্তা, পেরেশানি দূর হয়।

✅ বেকারত্ব দূর হয়।

✅ আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য অর্জিত হয়। তার তাওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।

✅ মৃত্যুর সময় ফেরেস্তারা তার জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে৷

✅ হাশরের মাঠে মানুষ যখন প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে, তখন ইস্তিগফারকারী থাকবে আরশের ছায়াতলে।

✅ কিয়ামতের দিন মানুষ যখন অস্থির থাকবে, ইস্তিগফারকারী তখন ডানপন্থী মুত্তাকিনদের দলে থাকবে।

✅ মন্দ কজ থেকে বেঁচে থাকা যায়।

✅ আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণও তার জন্য দু'আ করেন।

উৎসঃ নাদ্বরতুন নাঈম ফি মাকারিমি আখলাকির রাসূলঃ ২/৩০২