সুখী মুসলিম দম্পতিদের ১০টি গোপন রহস্য

সুখী মুসলিম দম্পতিরা যে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস গড়ার মাধ্যমে দাম্পত্যজীবনকে আরো সুন্দর ও কার্যকর করে তোলে তা অনেকের কাছেই গোপন রহস্য। কিন্তু আপনি যদি এ অভ্যাসগুলো আয়ত্ত্ব করতে পারেন আপনার দাম্পত্য জীবনও হয়ে উঠবে এক টুকরো জান্নাত; ইংশাআল্লাহ। আসুন জেনে নেই,

১. একে অপরের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা 

দাম্পত্যের নানা বাঁকে একে অপরের জন্য করা কষ্ট, ত্যাগ, যত্নগুলো স্মরণ করে কৃতজ্ঞ থাকুন সঙ্গির প্রতি। প্রতিদিন অন্তত ১ বার তাকে মুখফুটে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন। ধন্যবাদ বা জাযাকাল্লাহ খাইর বলুন। কৃতজ্ঞতার প্রকাশে হাসিমুখে কথা বলুন, অনিন্দ্যসুন্দর উচ্ছ্বল হাসি সম্পর্ককে আরো সুন্দর করে তোলে। সহমর্মিতা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এমন হাসিই হাসুন; কমেডি হাসি বা বেশি অনর্থক হাসাহাসি পারস্পরিক সম্মানকে কমিয়ে দেয়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশে সঙ্গির জন্য কিছু না কিছু করুন। কাজে সহায়তা করুন। পারস্পরিক সুন্দর মুহুর্তগুলো লিখে রাখতে পারেন। যেসব বিষয়ে আপনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।

২. উভয়ে উভয়কে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসা

বিভিন্ন মিডিয়া ও সামাজিক নানা প্রভাবের কারণে এ বিষয়টি অনেকেই বুঝতে সক্ষম নয়; 

উভয়ে উভয়কে আল্লাহর প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। উভয়ের ভালবাসা, মঙ্গলকামনার সীমা শুধু দুনিয়া নয়, আখিরাতও। উভয়ের চরিত্র রক্ষায় একে অপরকে পোষাক হবে। তারা উভয়ে উভয়কে ভালবাসবে কিন্তু তার একটা সীমারেখা থাকবে। বর্তমানে অধিকাংশই তাদের জীবনকে যারা শুধুই প্রেম-ভালাবাসা আর উভয়ে উভয়কে নিয়ে ব্যস্ত থাকাকেই বোঝে, পরস্পরকে পাগলের মত ভালবাসে; যা দ্বীন আমাদের শিক্ষা দেয় না। 

তাই মুসলিম দম্পতি উভয়কে ঠিক ভালবাসবে না, যে পরিমাণে শুধুমাত্র ভালবাসা যায়। সে পরিমাণে ভালবাসাটা শিরকের অন্তরগত। তাই এটা তারা সবসময়ে মনে রাখে যে, তারা উভয়েই আল্লাহর বান্দা। উভয়েরই একের উপর অপরের অধিকার আছে ঠিক, ভালবাসা আছে ঠিক কিন্তু তার একটা সীমাও রয়েছে। উভয়ে মিলে কিছু কর্তব্য আছে আবার এককভাবেও আছে যেগুলো সম্পাদনে উভয়ে উভয়কে সহায়তা ও স্পেস দেয়াটাই প্রকৃত মুসলিম দম্পতিদের ভালবাসার প্রকাশ। ভালবাসাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যাবে না যে জীবনটাই তার জন্য হয়ে যায়, বা তাকে ছাড়া জীবনযাপন অসম্ভব জ্ঞান হয়। কেননা, আল্লাহর জন্যই ভালবাসা, এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করার পথ খোলা রাখতে হবে।

৩. উৎকৃষ্ট বন্ধু/সঙ্গিদের মত যোগাযোগ রক্ষা করা 

খুব কাছের বন্ধুর সাথে যেমন খুব বেশি যোগাযোগ রক্ষা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করা হয়, খেলাধূলা, হাসি-ঠাট্টা করা হয় আপনার সঙ্গির সাথেও তা করুন। দাম্পত্যকে রোবটিক বানিয়ে ফেলবেন না। আপনাদের উভয়ের যেকোন বিষয়ে পরামর্শ প্রয়োজন হলে করুন। পারস্পরিক অধিকার সংরক্ষণ করুন। ভিন্নতাকে শ্রদ্ধার সাথে মেনে নিন। প্রশংসা করুন। উৎসাহ দিন। দিনের নানা বিষয়ে একে অপরকে শেয়ার করুন।

 

৪. উভয়ের প্রাথমিক চাহিদা পূরণকে অগ্রাধিকার দেয়া 

উভয়ের প্রতি ভালবাসা, ভাল ব্যবহার পাওয়া, ইতিবাচক মনোভাব রাখা, মনোদৈহিক চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখা, ছোট-ছোট খুশি ছড়ানো বিষয়ে তারা অগ্রাধিকার দেয়। ভুলে যায় না।

৫. উভয়ে উভয়ের জন্য সুকুন বা চক্ষুশীতলকারী হওয়া 

উভয়ে উভয়ের জন্য শান্তির স্থল হওয়া। কোন বিষয় এর অন্তরাল হলে সেই বিষয় উপেক্ষা করা বা এড়িয়ে চলা। হাসিমুখ চক্ষুশীতলকারী, সঙ্গির জন্য comfort ও support হয়ে উঠুন। সঙ্গির জন্য সজ্জা গ্রহণ করুন, পরিচ্ছন্ন থাকুন, উত্তম পোষাক পরিধান করুন। সুগন্ধি ব্যবহার করুন।

৬. উভয়ে উভয়ের বিকাশে এগিয়ে আসা 

দ্বীনকে মেনে চলার পথে উভয়ের সহায়ক হওয়া। কোন এচিভমেন্ট লাভে সহায়ক হওয়া। প্রস্ফুটিত হবার অনুপ্রেরণা হউন।

৭. উভয়ে উভয়কে সময় দেয়া 

বিশেষজ্ঞদের মতে দম্পতিদের অন্তত আধ-ঘন্টা একে অপরের জন্য দেয়া উচিত। সেটা চেষ্টা করুন। প্রতিদিন অন্তত আধ-ঘন্টা হলেও তাকে সময় দিন। সময় করে একটা ছোট টেক্সট করুন, কল করুন। বাড়ি ফিরে কোন কাজে ব্যস্ত হবার আগে তাকে কিছু সময় দিন।

৮. প্রকৃত শত্রু নিধনে তৎপড় থাকা 

অহংকার, হিংসা, শয়তানের কুমন্ত্রনা, বদনজর-অপরের হিংসা থেকে বাঁচুন। ইগো বা আত্ম-অহংকার, আত্ম, আমিত্ব, আত্মপ্রীতি থেকে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা করুন। ইগো আপনাকে না ভাল মুসলিম হতে দেবে তা একজন ভাল সঙ্গি। শয়তান বা ইবলিশ। আপনার প্রধান শত্রু। দাম্পত্য সম্পর্কে ছোট্ট বিষয়কে বড় করে তোলা তারই কাজ। বদনজর বা অপরের হিংসা থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন। দাম্পত্য ও ব্যক্তিগত ভাল বিষয়গুলো যা অন্যের হিংসার কারণ হতে পারে তা গোপন রাখুন।

৯. সঙ্গির ব্যক্তিত্বকে উপলব্ধি করা 

উভয়ে উভয়ের মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করুন। তার মানসিক চাপরোধে সহায়তা করুন। সব সময়, সব বিষয়ে তাকে নজরে রাখবেন না; তাকে কিছুটা হলেও Space দিন, নিজের মত থাকতে দিন; প্রয়োজনে পাশে দাড়ান, প্রয়োজনে একা থাকতে দিন ।

১০. বিবাদে আল্লাহর খুশির বিষয়ে সচেতন হওয়া

দাম্পত্য কলহে যেকোন পদক্ষেপ, শব্দ ‍উচ্চারণে আল্লাহকে স্মরণ রাখা। আল্লাহকে খুশি রাখতে ধৈর্য্য ধারণ করা, আল্লাহর খুশির জন্য ক্ষমা করে দেয়া।

(উৎসঃ 10 Habbits of happy muslim couple নোট থেকে)