Monday, 1 April 2019

জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে গিয়ে বাহ্যিক দ্বীনদারি দেখে তার ব্যাপারে প্রচণ্ড মুগ্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে

জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে গিয়ে আমরা অনেকেই একটা বড় ভুল করি। সেটা হলো, কারো বাহ্যিক দ্বীনদারি দেখে তার ব্যাপারে প্রচণ্ড মুগ্ধ হয়ে যাওয়া। এ-প্রসঙ্গে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা-

(এক)
যাকে বাহ্যিকভাবে দেখে আপনি দুর্বল হয়ে গেছেন, তার অভ্যন্তরীণ দ্বীনদারির অবস্থা তেমন ভালো নাও হতে পারে। হতে পারে, তিনি সলাতের ব্যাপারে উদাসীন- বিশেষত ফরযের বাইরে সুন্নাতে মুয়াক্কাদার ব্যাপারে তাঁর মধ্যে তেমন সিরিয়াসনেস নেই। হতে পারে, তিনি কুদৃষ্টির মত জঘন্য কোনো ব্যাধিতে আক্রান্ত। এমনও হতে পারে, তিনি আসলে প্রচণ্ড অহংকারী- স্ত্রীর মতামতকে ভবিষ্যতে তিনি পাত্তাও দিবেন না। এমন অনেক হিডেন প্রবলেম থাকতে পারে, যেগুলো জানতে পারলে তার প্রতি আপনার মুগ্ধতা হাওয়া হয়ে যাবে।

(দুই)
এ-তো গেলো, তার অভ্যন্তরীণ দ্বীনদারির অবস্থা। তার দুনিয়ার জীবনেও হয়তো বড় কোনো দুর্বলতা আছে, যা আপনি বাহ্যিকভাবে বুঝতে পারছেন না। হতে পারে, তার চোখ দুটো দুনিয়াবি কামনা-বাসনায় পরিপূর্ণ, যা তিনি অন্যকে বুঝতে দেন না। তার মধ্যে থাকতে পারে বিরক্তিকর কোন বদঅভ্যাস, যা তার সাথে গভীরভাবে না মেশা পর্যন্ত কেউ বুঝতে পারবে না।

(তিন)
শুরুর কথাগুলোতে ফিরে যাই। যার বাহ্যিক দ্বীনদারি দেখে আপনি মুগ্ধ, তার হিডেন প্রবলেমগুলো আপনি জানেন না। ফলে আপনার মুগ্ধতা দিনে দিনে এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে, আপনি ভাবতেও পারছেন না- আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা তার চেয়েও দ্বীনদার কাউকে আপনার জন্য মিলিয়ে দিতে পারেন। ব্যক্তিবিশেষের প্রতি মুগ্ধতার কারণে আপনি নিজেকে এক পর্যায়ে খুবই সস্তা ভাবতে শুরু করবেন; এমনকি আপনার ভেতর থেকে আত্মমর্যাদাবোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ গুণটি অনুপস্থিত হতে থাকবে।

(চার)
তাহলে সমাধান কী?
ইসলামই সমাধান। ইসলাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছে, ব্যক্তিবিশেষের জন্য পাগলপারা হওয়া যাবে না; বরং “চক্ষুশীতলকারী ( ﻗُﺮَّﺓُ ﺃَﻋْﻴُﻦْ )” কাউকে জীবনসঙ্গী করার জন্য আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। চক্ষুশীতলকারী মানে কি? এর মানে, যাকে দেখলে আপনার চোখ শীতল হয়ে যাবে! এটি এমন একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ, যা ব্যক্তির মধ্যে যাবতীয় দ্বীনি ও দুনিয়াবি কল্যাণকে অন্তর্ভুক্ত করে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিবিশেষকে নয়, আমভাবে এই গুণবিশিষ্ট কাউকে আল্লাহর নিকট চাইতে হবে বেশি করে। মাথা থেকে এই ধারণা সরাতে হবে যে, "অমুকের চেয়ে ভালো কীভাবে পাব? অমুক তো আমার পরীক্ষিত" ইত্যাদি।

(পাঁচ)
আল্লাহর নির্ধারিত তাকদিরকে কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। স্বাভাবিক দৃষ্টিতে যতই সম্ভাবনাময় মনে হোক-না কেনো, তাকদিরের ফয়সালা না থাকলে নির্দিষ্ট কাউকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া সম্ভব নয়। এমতাবস্থায়, আমরা যখন কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করি আর সেই স্বপ্নটা ভাগ্যের বাস্তবতায় এসে ভেঙে চৌচির হয়ে যায়, তখন হতাশ হয়ে পড়ি। এজন্য আমাদের কখনই উচিত নয়, নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা বা তার জন্য মালিকের দরবারে দু'আ করা; বরং আমরা আমভাবে “চক্ষুশীতলকারী” কাউকে কামনা করব এবং সেই অদেখা-অচেনা চক্ষুশীতলকারীর জন্য আল্লাহর নিকট ফরিয়াদ জানাবো। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বান্দাকে হতাশ করবে না। এটুকু বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহর জন্য এটা কোনো ব্যাপারই না, তিনি উত্তম কাউকে মুহূর্তের মধ্যেই মিলিয়ে দিতে পারেন। অতএব, আল্লাহ্ 'আযযা ওয়া জাল্লার উপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে। হাদিসে কুদসিতে মহান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন-
ﺍﻧﺎ ﻋﻨﺪ ﻇﻦ ﻋﺒﺪﻱ ﺑﻲ، ﻭﺃﻧﺎ ﻣﻌﻪ ﺇﺫﺍ ﺩﻋﺎﻧﻲ
“আমার ব্যাপারে বান্দা যেমন ধারণা রাখে, আমি তার সাথে তেমনই (আচরণ করি)। আর সে যখন আমার নিকট দু'আ করে, তখন আমি তার সাথেই থাকি।” (সহিহ মুসলিম: ২৬৭৫, তিরমিযি: ২৩৮৮, আহমাদ: ৯৭৪৯)

অতএব, আল্লাহর সক্ষমতার সামনে নিজের মুগ্ধতা, বাস্তবতা - সবকিছুকে তুচ্ছজ্ঞান করতে হবে এবং তাঁর ব্যাপারে সর্বোত্তম ধারণা রেখে উত্তম জীবনসঙ্গীর জন্য অবিরত দু'আ করে যেতে হবে ও নিজেকেও সেভাবে প্রস্তুত করতে হবে। আল্লাহ্ আমাদের নেক মনোবাসনা পূর্ণ করুন। আমিন।

লিখেছেন: Al Mujahid Arman

No comments:

Post a Comment