পশ্চিমা বিশ্বের মত আমাদের সমাজেও অতি সাম্প্রতিক বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বেড়েই চলছে।জনৈক এক ভাইয়ের পোষ্ট থেকে নেয়া কথা দিয়ে শুরু করছি-
বিবাহ বিচ্ছেদের কিছু কারন নিচে বিবেচনা করা হল-
★সাধারনত পুরুষেরা যে অভিযোগের কথা বলে-
১। নারীদের ফেসবুক , টুইটার , ইয়াহু - তে আড্ডা দেয়া ।
২। সামাজিক অবক্ষয় ,
৩। বিয়ের আগের প্রেম এর কথা জানতে পারা ,
৪। পরকিয়া প্রেম ,
৫।অন্য পুরুষের সাথে বন্ধুত্ব , ইত্যাদি ।
★আর নারীরা পুরুষদের প্রতি অভিযোগ হিসেবে বলে-
১। নেশা করা ,
২। শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করা ,
৩। ওয়াইফ এর প্রতি যত্ন না নেয়া ,
৪। ওয়াইফ -কে সময় দিতে না পারা ,
৫। ভালোবাসার অভাব ,
৬। বন্ধুদের সাথে পার্টি করা ,
৭। ফেসবুক , টুইটার , ইয়াহু - তে মেয়েদের সাথে আড্ডা দেয়া ,
৮। দাম্পত্য কলহ ,
৯। স্বামীর অসহনীয় আচারন এবং সংসার চালাতে অপারগতা ,
১০। সন্দেহের চোখে দেখা ,
১১। অবিশ্বাস , ইত্যাদি ।
কারন যাই হোক প্রায় সব বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে যখন তারা মা-বাবা হন । যার কারনে এইসব পরিবার এর ছেলে মেয়েরা ঠিক ভাবে বেড়ে ওঠেনা ।আর এইভাবে বিচ্ছেদের ঘটনা বাড়তে থাকলে সামাজিক বিপর্যয় নিশ্চিত । কারন একটা শিশুর বেড়ে ওঠা তার পরিবার থেকে ।
আমাদের যোগাযোগ এর মাধ্যম ( ফেসবুক , মোবাইল ফোন , টুইটার , ইয়াহু , ইন্টারনেট , ইত্যাদি ) আমাদের জীবনকে সহজ করছে কিন্তু পারিবারিক বন্ধন কে দুর্বল করছে ।এখন যদি যোগাযোগ মাধ্যমকে কেবল দোষারোপ করি তাহলে সেটা আসলে Problem Identify করার জন্যে Justified কোন চিন্তার প্রতিফলন ঘটায় না।যোগাযোগ মাধ্যম আছে থাকবে, তবে এটা কিভাবে ব্যবহার হবে সেটা নির্ভর করে যারা এটা ব্যবহার করছে তারা কোন চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত, তারা যে সমাজে বসবাস করছে সেই সমাজে কোন চিন্তাগুলো Dominant তার উপর।যে সমাজে পরকীয়া করাকে দেখানো হয় একজন পুরুষের যোগ্যতা হিসেবে কিংবা ফেসবুকে একাধিক প্রশংসাকারী ছেলে ফ্রেন্ড থাকাকে বুঝানো হয় কোন মেয়ের গৌরবের বিষয় হিসেবে অথবা Hot Look নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে সবার মাঝে নিজেকে উপস্থাপন করাটাকে স্মার্টনেস হিসেবে শেখানো হয় সেই সমাজের মানুষের মাঝে আপনি কি আর আশা করতে পারেন ?
ভারতীয় সিরিয়ালগুলোতে (যেটাতে দেশের অধিকাংশ মেয়েরা addicted) দেখানো হয়,কিভাবে কূট বুদ্ধি দিয়ে একটি সুখের সংসারে আগুন লাগানো যায় আর কেড়ে নেয়া যায় সমাজের শান্তি।
এর সাথে যোগ হয়েছে আমাদের দেশের কিছু Talented বুদ্ধিজীবি( বুদ্ধিব্যবসায়ী ) যারা ব্যাচেলর, থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার সিনেমা তৈরী করে শিখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে পরকিয়া করতে হয়, লিভ-টুগেদার করাটা কিভাবে জীবণকে সহজ করে দেয় দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে।জিনিসগুলোকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে যেন সিনেমাতে যা হচ্ছে সেটাই যেন বর্তমান সমাজের প্রতিচ্ছবি আর মানুষকেও ভাবাচ্ছে এটাই স্বাভাবিক চিত্র বর্তমান সমাজের আর তুমি যদি এমনটা করে থাকো তাহলে লজ্জা পাবার কিছু নেই, কারন সমাজের mass public তোমার মতই।আবার কিছু বুদ্ধিজীবি তাদের সাহিত্যে কিংবা পশ্চিমা সংস্কৃতির ফসল ভালবাসা দিবসে কলাম লিখে বলে দিচ্ছেন পরকিয়া করা প্রত্যেক পুরুষের মৌলিক অধিকার, এটা তার ব্যক্তিস্বাধীনতার একটি অংশ। ভাবছেন এদেরকে Talented কেন বলছি ? কারন টা খুব স্পষ্ট, তারা কিভাবে এই জিনিসগুলো মানুষের মাঝে ঢুকিয়ে দেয়া যায় সেই ব্যাপারটা খুব ভাল ভাবেই রপ্ত করেছেন।এখন প্রশ্ন আসতে পারে তারা কেন আদা-জল খেয়ে লেগেছেন এগুলো প্রচার করতে।হিসাবটাও খুব সোজা, বাংলায় একটা কমন গল্প অনেকেরই হয়তো জানা আছে, যে এক শিয়ালের লেজ কাটা যাওয়ার পর সে উদ্দ্যত হয় বাকি শিয়ালের লেজ কিভাবে কাটা যায় যাতে তাকে সেই জংগলে বেমানান না লাগে।বর্তমানে সেই বুধিজীবিরা নিজেদের ভোগ-লালসা কে সমাজে লিগালাইজড করার জন্যে উঠে পড়ে লেগেছে।আরেকটা অন্যতম প্রধান কারন হল ব্যবসা, আমি শুরুতেই তাদেরকে বুদ্ধিব্যবসায়ী বলে অবিহিত করেছি।প্রশ্ন আসতে পারে তারা কিভাবে ব্যবসায়ী।এই যে তারা একজন মানুষকে ভোগবাদী করে তুলছেন তাতে এই পুজীবাদী সমাজে ভোক্তা সংখা বেড়ে যাচ্ছে আর এই ভোক্তা বাড়ানোর কাজে সাহায্যে করার জন্যে সমাজে তাদেরকে পাইয়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বুদ্ধিজিবী খেতাব যা বিক্রি করে তাদের দিন ভালই কেটে যাচ্ছে।
তাদের দিন তো কেটে গেল কিন্তু তাদের দেখানো পথে যেই নারী-পুরুষ হাটা শুরু করলেন তাদের জীবনের হাল কিসে গিয়ে দাড়ালো ?? কেও স্মার্ট হতে গিয়ে পরকীয়ার দিকে ঝুকলো কেওবা আবার নিজেকে যৌবনাময়ী করে উপস্থাপন করার জন্যে বিউটি পার্লার গুলোতে লাইন লাগিয়ে দিল।মহল্লার ছেলে কিংবা ভার্সিটির বন্ধু অথবা কর্মক্ষেত্রের কলিগের সামনে নিজেকে আকর্ষনীয় করে তুলে ধরার প্রতিযোগিতায় নেমে গেলেন তারা।ফলাফল গিয়ে দাড়াল যেটা তা হচ্ছে তৈরী হতে শুরু করল ইভটিজার, দাম্পত্য জীবনে পরষ্পরের প্রতি পারষ্পারীক অবিশ্বাস,কেও বা এসব সহ্য করতে না পেরে বেছে নিল আত্মহত্যার পথ, কেওবা ধরল নেশা আবার কেও বা ক্রোধে উন্মাদ হয়ে চালাল শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করা।সুখের সংসার হয়ে উঠলো রণক্ষেত্রে।
আরো একটা বিষয় এই সমাজে চালু হয়ে গেছে আর তা হচ্ছে একজন মানুষ কে বিচার করতে সেখানো হচ্ছে টাকার মাধ্যমে।ভাবছেন ছি ছি এই শিক্ষা কোথায় দেওয়া হয় ?? ভাই একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন এই সমাজে তাকেই সফল মানুষ হিসেবে দেখানো হয় যে অর্থবিত্ত তৈরী করতে পেরেছে সেটা হোক ন্যায় কিংবা অন্যায় পথে। আর যে মানুষটি সততা ধরে রাখতে গিয়ে জীবনে কোন সম্পদই করতে পারলো না তাকে দেখানো হয় নিতান্তই একজন পরজিত মানুষ হিসেবে কিংবা বলা হয় He is unfit for this society. ছোট বেলাতেই যেখানে একজন শিশুকে শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে "লেখা পড়া করে যে গাড়ি-ঘোড়া চরে সে " প্রথমেই লেখা পড়ার উদ্দেশ্য হিসেবে দেখানো হল অর্থ, তো সে কি শিখবে ?? অর্থই যেখানে সাফল্যের আর সুখের চাবিকাঠি হয়ে যায় সেখানে একজন স্ত্রী তার স্বামীকে সেভাবেই দেখতে চাওয়া শিখে যায়, কারন সমাজে তার একটা অবস্থান (!!) করে নিতে সে তৎপর হয়ে উঠে।কিন্তু বেচারী স্বামীর পক্ষে কতটাই বা উপার্জন করা সম্ভব হয় ?? শুরু হয়ে যায় চাওয়া-পাওয়ার হিসাব মেলানো আর এক সময় সম্পর্ক হয়ে উঠে কেবল দেনা-পাওনার একটি অলিখিত চুক্তিতে।এক সময় স্ত্রী হয়ত পাশের বাড়ির অন্য পুরুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে কারন তার সম্পদ আছে,বিশ্বাস করতে শুরু করে সেই ব্যক্তি তাকে তার স্বামীর চেয়ে সুখে রাখতে পারবে।
এর মাঝে সমাজে আবার আরেক শ্রেনী সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে নারীদেরকে পন্য রূপে সমাজে তুলে ধরছেন আর তাতে সমাজের পুরুষদের শিখিয়ে দেওয়া হচ্ছে সুন্দরের Definition. একসময় সেই পুরুষদের কাছে তাদের মমতাময়ী স্ত্রীদেরকে ভাল লাগে না কারন তাদের স্ত্রীদের ফিগার, গায়ের রঙ তাদেরকে শিখিয়ে দেওয়া সুন্দরের Definition এর সাথে মেলে না। ঢাকা পরে যায় তাদের মনের সৌন্দর্য।এর মাঝেই তাদের কানে কানে সেই বুধিজীবিরা শিখিয়ে দিচ্ছেন যাকে ভাল লাগে না তার সাথে শুধু শুধু বিয়ে নামক এক শিকলে আবধ্য করে রেখে কেন নিজেকে কষ্ট দিবে। এর চাইতে মন যা চায় তাই কর না কে বাধা দেয়, আর যদি একান্তই সম্পর্ক ছিন্ন করতে না পার তাহলে পরকীয়াতো আছেই।আর আভাবেই মৃত্যু হয় একটি সুন্দর সম্পর্কের।অথচ দেখুন ইসলাম এই ক্ষেত্রে কি বলে...
"নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ, অনেক কল্যাণ রেখেছেন।" [TMQ ৪:১৯]
সব থেকে বড় বেপারটা লক্ষ্য করুন , আমরা কিছু অর্থহীন সম্পর্কের জন্য নিজেদের অর্থপূর্ণ সম্পর্ক গুলকে অবহেলা করছি । যে সম্পর্ক গুলো আমাদের ইসলাম আমাদের স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ বিধান করে দিয়েছেন ,সেই সম্পর্ক গুলোকে আমরা নষ্ট করে ফেলছি শুধু মাত্র নিজেদের খামখেয়ালীপনা আর অবচেতন চিন্তা ভাবনার দরুন । এর প্রভাব আমরা ভালোভাবেই লক্ষ্য করছি যেমন , সমাজের অস্থিরতা । সামাজিক মূল্যবোধ , শিষ্টাচার , ভদ্রতা , এইসব এখন বিকৃত প্রায় শব্দ ।
একটা শিশুর বেড়ে ওঠা , প্রথমিক শিক্ষা , মানবতার শিক্ষা , মৌনতার শিক্ষা , ভদ্রতার শিক্ষা , শিষ্টাচার , মূল্যবোধের শিক্ষা , নৈতিকতার শিক্ষা সব তার পরিবার এর কাছে থেকে পায় । যে পরিবারে বাবা মা এর মাঝে দঢ় , মজবুত ,ভালোবাসার ও একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা সুসম্পর্ক নেই সেই পরিবার থেকে একটা শিশু কি বা শিক্ষা পাবে ? ওই শিশু বড় হয়ে সমাজকে বা কি দিবে ?
প্রতি বছরে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা ক্রমান্বয়ে বেরেই চলেছে । আর এই বিচ্ছেদের প্রবনতা মেয়েদের মাঝে এ বেশি । যা আমাদের ভবিষ্যৎ সামাজিক অস্থিরতা অনেক গুনে বারিয়ে দিবে ।
এইভাবে বিচ্ছেদের ঘটনা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হুমকির মুখে ফেলবে ।আমরা হয়তো এমন একটা সমাজে বসবাস করবো যেখানে পরিবার বলতে কিছু থাকবে না । আর সেই সমাজের রুপ কেমন হবে তা একবার কল্পনা করে দেখুনতো ।
চোখে অন্ধকার দেখছেন তো, ভাবছেন এ থেকে কিভাবে সমাজ কে বাচানো যায় ?? ঐ যে কথায় আছে না গাছের গোরাকে অক্ষত রেখে যতবার ই ডাল-পালা ছেটে দিন না কেন তা আবার শাখা-প্রশাখা ছড়াবে।কাজেই গাছটার মূল সহ উৎপাটন করে ফেলে দিতে হবে।সমষ্যা সেহেতু এই ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থা তাই তার তার মূল সহ উৎপাটন করে ছুড়ে ফেলে দিতে হবে আর সেখানে ইসলামের সুশীতল ছায়ার তলে যাতে সম্পর্ক গুলো সুমধুর হয়ে উঠতে পারে তার জন্যে বীজ হিসেবে ইসলাম কে সমাজের ভীত হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে।কারন ইসলামী রাষ্ট্র এই সমস্ত বুদ্ধিব্যবসায়ী দের কে সমাজে ব্যবসা করতে দিবে না, ইসলাম অনুমতি দিবে না সুন্দরী প্রতিযোগীতার নামে আমার মা, বোন কে পন্য হিসেবে দেখানোর সুজোগ।ইসলাম মানুষকে ভোগবাদী হতে সেখাবে না অর্থ উপার্জন কে জীবনের সফলতা হিসেবে শিক্ষা দিবে না ইসলাম শিখাবে কিভাবে আল্লাহর ভয় মনের মাঝে রেখে নিজেদের দ্বায়িত্ব পালন করে তাকওয়া অর্জন করা যার যার দ্বারা পরকালে সফলতা হিসেবে বেহেস্ত লাভ করা যায় যা কিনা জীবনের একমাত্র সাফল্য।ইসলামী সমাজ শেখাবে কিভাবে স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব পালন করতে হয় আর স্বামীর প্রতি স্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে হয়।আল্লাহ সুবানাহুতাওয়ালা বলেন
"আর পুরুষদের যেমন স্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী।" [TMQ ২:২২৮]
পরিশেষে একটি কথাই বলব স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক স্বয়ং আল্লাহ প্রদত্ত (যা টাকা পয়সা দিয়ে পরিমাপ করা যায় না) সম্পর্ক যে সম্পর্কে আল্লাহ ভালবাসা ঢেলে দিয়েছেন, আর যে দম্পতী ইসলাম মেনে চলবে আল্লাহ সেই সম্পর্ক মধুর করে দিবেন আর তার রহমত ও বরকত দান করবেন।আল্লাহ সুবানাহুতাওয়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন,
"আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে" TMQ [৩০:২১]
No comments:
Post a Comment