কোন রাতটি লাইলাতুল ক্বদরঃ
এ প্রশ্নের উত্তর স্বরুপ নিম্নের হাদিসগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক-
১. এ রাতটি রমজান মাসে।এ রাতের ফযিলত কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে।
২. এ রাতটি রমজানের শেষ দশকে।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"তোমরা রমজানের শেষ দশকে ক্বদরের রাত তালাশ কর"।(সহীহ বুখারি)
৩. এটি রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন," তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতে ক্বদরের রাত তালাশ কর"।(সহীহ বুখারি)
৪. রমজানের ২৭শে রজনী এ রাত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।হাদীসে আছে,
(ক) উবাই ইবনে কাব রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্নিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন যে "আল্লাহর শপথ করে বলছি,আমি যতদূর জানি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে যে রজনীকে ক্বদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল লাইলের নির্দেশ দিয়েছিলেন,তা হল রমাজানের ২৭ তম রাত"।(সহীহ মুসলিম)
(খ) আব্দুল্লাহ বিন উমার থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"যে ব্যাক্তি ক্বদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক,সে যেন তা রমজানের ২৭ রজনীতে অনুসন্ধান করে।"(মুসনাদে আহমাদ)
৫. ২১ শে রমজান লাইলাতুল কদর তালাশ করা-
আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্নিত,তিনি বলেন"আমরা লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে আলোচনা করলাম অতপর আমি আবু সাইদ খুদরি (রাঃ) এর নিকট গেলাম,তিনি আমার একান্ত বন্ধু ছিলেন।আমি তাকে বললাম,আপনি কি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন,হ্যাঁ।আমরা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে রমজানের মধ্য দশক ইতিকাফ করলাম।অতপর তিনি একুশের সকালে বের হয়ে খুতবাহ প্রদান করলেন।তিনি বললেন,আমি লাইলাতুল ক্বদর দেখেছি, কিন্তু আমি তা ভুলে গেছি অথবা আমাকে তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।অতএব তোমরা তা শেষ দশকের প্রত্যেক বেজোড় রাতে তালাশ কর।আমাকে দেখানো হয়েছে যে আমি মাটি ও পানিতে সেজদা করছি,যে রাসুলের সাথে ইতিকাফ করছিল সে যেন ফিরে আসে।তিনি বলেন,আমরা ফিরে গেলাম কিন্তু আসমানে কোন মেঘ দেখিনি।তিনি বলেন,মেঘ আসল ও আমাদের উপর বর্ষিত হল,মসজিদের ছাদ টপকে বৃষ্টির পানি পড়ল,যা ছিল খেজুর পাতার।সালাত কায়েম হল,আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখলাম,তিনি মাটি ও পানিতে সেজদা করছেন।তিনি বলেন,আমি তার কপালে পর্যন্ত মাটির দাগ দেখেছি।"(সহীহ বুখারি ১৯১২,সহীহ মুসলিম ১১৬৭)
৬. ২৩ শে রমজান লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করা-
আব্দুল্লাহ ইবনে উনাইস জুহানি (রাঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছে,অতপর তা ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।আমি দেখেছি,আমি সে রাতের সকালে মাটি ও পানিতে সেজদা করছি।তিনি বলেন,আমাদের তেইশ তারিখের রাতে বৃষ্টি হয়েছিল।রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের সাথে সালাত আদায় করে ঘুরে বসেন,তখন তার নাকে মাটি ও পানির আলামত ছিল।উনাইস জুহানি (রাঃ) বলেন,তা ছিল রমজানের ২৩ তারিখ।"(মুসলিম ১১৬৮,আবু দাউদ ১৩৭৯)
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,"আমি রমযানে ঘুমিয়ে ছিলাম,আমাকে নিয়ে আসা হল আর বলা হল আজকে কদরের রাত।আমি তন্দ্রাসহ দাড়িয়ে রাসুলের তাঁবুর রশি ধরে নিকট গিয়ে দেখলাম,তিনি নামায পড়ছেন।আমি লক্ষ্য করলাম,সে রাত ছিল তেইশের রাত"।(আহমাদ ১/২৫৫, ইবনে আবি শায়বা ২/২৫০, তাবরানি ফিল কাবীর ১১/২৯২)
৭. আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ক্বদর সম্পর্কে বলেছেন,"লাইলাতুল ক্বদর সাতাশ কিংবা উনত্রিশের রাত।সে রাতে পৃথিবীতে ফেরেশতাদের সংখ্যা কঙ্করের চেয়ে অধিক হয়।"( আহমাদ ২/৫১৯, তায়লিসি ২৫৪৫, ইবনে খুযাইমাহ হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন)
৮. কদরের রাত হওয়ার ব্যাপারে সম্ভাবনার দিক থেকে দ্বিতীয় হল ২৫ তম রজনী,তৃতীয় হল ২৯ তম রজনী,চতুর্থ হল ২১ তম রজনী,পঞ্চম হল ২৩ তম রজনী।
৯. সর্বশেষ আরেকটি মত হল-মহিমান্বিত এ রজনী স্থানান্তরশীল।প্রতিবছর একই রজনীতে তা হয় না বা ২৭ তারিখে শুধু হয় না।আল্লাহর হিকমত ও ইচ্ছায় তা কোন বছর ২৫,কোন বছর ২১,কোন বছর ২৩,কোন বছর ২৯ তম রজনীতেও হয়ে থাকে।
লাইলাতুল ক্বদরের আলামতঃ
লাইলাতুল ক্বদরের কিছু আলামত হাদীসে বর্নিত হয়েছে-
১. যির ইবনে হুরাইশ (রহঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন,আমি উবাই ইবনে কাবকে বলতে শুনেছি।তিনি বলেন,আল্লাহর শপথ করে বলছি,যিনি ব্যতিত কোন ইলাহ নেই।লাইলাতুল ক্বদর যে রমযানে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।তিনি নির্দিষ্টভাবে কসম করে বলেন,আল্লাহর শপথ আমি জানি তা কোন রাত,এটা সে রাত যার কিয়ামের নির্দেশ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের প্রদান করেছেন। তা হচ্ছে সাতাশের সকালের রাত,যার আলামত সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে সাদা তার কোন কিরন থাকবে না।"(সহীহ মুসলিম)
২. ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"নিশ্চয়ই লাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে রমযানেরর শেষ সাতের মাঝখানে,সেদিন সূর্য তার শুভ্রতা নিয়ে উদিত হবে আর তার কোন কিরন থাকবে না।ইবনে মাসউদ বলেন,আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে সেরুপ দেখেছি,যে রূপ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন।"(আহমাদ ১/৪০৬,ইবনে আবি শায়বা ২/২৫০)
৩. উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) থেকে বর্নিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"লাইলাতুল ক্বদরের আলামত হল,তা হবে সাদা ও উজ্জ্বল,যেন তাতে আলোকিত চাঁদ রয়েছে।সে রাত হবে স্থির,তাতে ঠান্ডা বা গরম থাকবে না।তাতে সকাল পর্যন্ত কোন তারকা দ্বারা ঢিল ছোঁরা হবে না।সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে সমান ভাবে,চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়,তার কোন কিরন থাকবে না।সেদিন শয়তানের পক্ষে এর সাথে বের হওয়া সম্ভব নয়।"(আহমদ ৫/৩২৪,তাবরানি ফি মুসনাদিশ শামিয়্যিন ১১১৯,দিয়া ফিল মুখতারাহ ৩৪২,হাদিসের বর্নানাকারীগন নির্ভরযোগ্য)
৪. জাবের (রাঃ) থেকে বর্নিত,রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,"লাইলাতুল ক্বদর আমাকে দেখানো হয়েছে, অতপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে।সে রাত হবে সাদা উজ্জ্বল,না গরম না ঠান্ডা,যেন আলোকিত চাঁদ নক্ষত্রগুলোকে আড়াল করে রেখেছে,ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সে রাতের শয়তান বের হতে পারবে না।"(ইবনে খুযাইমা ২১৯০,ইবনে হিব্বান ৩৬৮৮,হাদীসটি সহিহ)
No comments:
Post a Comment