যখন বিমান বন্দর দিয়ে বিদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন তিনি,তখন ছিলেন পুরোদমে বাঙালি ও পর্দানশীল নারী।হিজাবে আবৃত হয়ে আনত নয়নে শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি।কিন্তু শিক্ষা শেষ করে যেদিন সেই একই বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করলেন,তখন তিনি কোন পর্দানশীল বা বাঙালি নারী নয় একজন ইউরোপ বা আমেরিকান নারীর মত।আজ তার পরনে টাইট ফিটিং জিন্সের প্যান্ট।যেদিন বিদেশের উদ্দেশ্যে বিমান বন্দরে হাজির হয়েছিলেন,সেদিন যাওয়ার বেলায় স্বামীর কাছে পুনঃপুন দুআ চেয়েছিলেন,বার বার দাম্পত্য জীবনের কথা মনে করছিলেন আর ভাব বিনিময় করছিলেন।আর দেশে ফেরার পর স্বামীর সাথে প্রথম কথা হল,"ওহ তুমি! আর তা বল কেমন আছ??"
কবীর ও কনা,দুজন স্বামী স্ত্রী।এইতো মাত্র অল্প কিছু বছর হল তারা দাম্পত্য জীবনের গাঁট বেধেছে।তাদের কোল জুড়ে আছে ফুট ফুটে একটি কন্যা সন্তান।দুজনেই শিক্ষিত,ভার্সিটি পড়ুয়া স্টুডেন্ট।জ্ঞান,বিবেচনা,বুদ্ধি,বিবেক সবই থাকার কথা তাদের মধ্যে।শিক্ষা জীবনে ভাল স্টুডেন্ট হিসেবে যথেষ্ট সুনাম ছিল,কনার।তাই পড়ালেখা শেষ করার পর পরই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পান।আর সেই সুবাদে তাকে বিদেশ যেতে হয়েছিল,উচ্চ ডিগ্রী নিতে।পরে এই ডিগ্রি অর্জন করতে যাওয়াটাই তার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
যখন বিমান বন্দর দিয়ে বিদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন তিনি,তখন ছিলেন পুরোদমে বাঙালি ও পর্দানশীল নারী।হিজাবে আবৃত হয়ে আনত নয়নে শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিদেশে রওনা হয়েছিলেন তিনি।কনা যখন বিদেশে পাড়ি জমালো,তখন তার সাথে পরিচিত হয় এক ইরানী যুবক।যেও একই ডিগ্রির জন্য পাড়ি জমিয়েছে একই জায়গায়।আস্তে আস্তে দুজন ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠে।একে অপরের কাছে আসতে শুরু করে।কনা,যে দেশের মাটিতে থাকতে একজন পর্দানশীল মহিলা ছিল।আজ তার আর পর্দা নেই।পর্দার বদলে পরনে উঠেছে জিন্স আর টাইট ফিটিং পোশাক।তার ধারনা এই পোশাকই তাকে খ্যতির আসনে অধিষ্ঠিত করবে।তারা দুজনে স্বামী স্ত্রীর মত বসবাস শুরু করে।তথাকথিত এই আধুনিকতার নোংরা স্রোতে গা ভাসালো,এক সময়ের পর্দানশীল মহিলা।
কবীর ফোন করলে,কনা তাতে বিরক্তি প্রকাশ করে।সময় নেই বলে দু এক মিনিট কথা বলেই ফোন কেটে দেয়,এমনকি নিজের মেয়ের সাথেও কথা বলতে দেয় না।যে নারী স্বামীর সাথে জীবনের গল্প করত,সেই আজ বিরক্তি প্রকাশ করছে নিজের বৈধ স্বামীর কাছে আর আধুনিকতার দোহাই দিয়ে ডেটিং করছে অন্য এক যুবকে সাথে।এভাবেই কেটে যায় কনার ডিগ্রি নেয়ার সময়গুলো।
দেশে ফিরে তাকে আর সেই পোশাকে পাওয়া গেল না,যা সে পরে বিদেশ গিয়েছিল।আর দেশে এসে স্বামীর সাথেও আগের মত কথা বলতে চায় না।বিমানবন্দরে নেমে কনা প্রথমে বাবা মার সাথে কথা বলে।তারপর সেই ইরানী যুবকটাকে ফোন দিলে,সে ফোন না ধরাতে কনা বলে উঠে,"নাভেদটা ফোন ধরছে না কেন??"একথা শুনে কবীরের অন্তরে সন্দেহের বীজ বপন হয়েছিল, কষ্টে বুকের হাড্ডিগুলো যেন জমে যাচ্ছিল কবীরের।শুধু স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে সবকিছু দেখে যাচ্ছিল কবীর। নামার কিছুক্ষণ পর সৌজন্যের খাতিরে কনা বলল,"ওহ তুমি! তো বলো কেমন আছ??"
আধুনিকতা নিরংকুশ ভাবে সবকিছু উগড়ে দিচ্ছে।বিজ্ঞানের অবদান কোথায় গিয়ে শেষ হবে,সে কথা বলা মুশকিল।তবে হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষ জ্ঞান বিজ্ঞানের এত উৎকর্ষে পৌছাতে সক্ষম হবে যে,যখন তারা নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে কথা বলবে।
"ঐ সত্তার শপথ,যার হাতে মুহাম্মদের প্রান,ততক্ষণ পর্যন্ত কেয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত বনের হিংস্র বাঘ কথা বলবে,কোড়া কথা বলবে,জুতার ফিতা কথা বলবে,স্ত্রী স্বামীর অনুপস্থিতিতে যে পাপ করেছে উরুর মাংসদ্বয় তার সংবাদ দিবে।"(জামে তিরমিযীঃ২১৮১)।
আলোচ্য হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী মানুষ চতুস্পদ প্রানী এমনকি জড় পদার্থের ভাষা বুঝতে সক্ষম হবে।আর এগুলোত বিজ্ঞানেরই অবদান।তো এই বিজ্ঞানের আরেকটি কল্যান হল ম্যাসেজিং, চ্যটিং যার মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে কথা বলা যায়।আর এ অবদানকেই কাজে লাগাল কনা।যদিও সে আজ দূরে,তবুও ইন্টারনেট যেন তার সেই ইরানী যুবককে কাছে এনে দিয়েছে।সে সেই যুবকের সাথে ম্যাসেজিং, চ্যাটিং শুরু করল।স্বামীকে খুব একটা সময় না দিলেও সেই যুবকের সাথে চলে তার প্রেমের লুকোচুরি।স্বামী কবীরকেও সে কথা বুঝতে দেয় না কনা।কিন্তু লুকিয়ে আর কতদিন এসব করা যায়,এক দিন না একদিন তা ঠিকই প্রকাশ পেয়ে যায়।কবীর অসুস্থতা আর বেকারত্বের চাপে ছিল এক ধরনের মানসিক রোগী।কিন্তু পৃথিবীতে বোধহয় একটা ক্ষেত্রে এসে সকল রোগের কার্যকারিতা থেমে যায়,মানুষ তার আপন গতিতে স্বপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠে।
একদিন কনার ফোনে সেই যুবকটির একটি ম্যাসেজ আসলে,কবীর তা দেখতে পায়।কনার এই আচরনে ঠিকই রাগে, ক্ষোভে ঝলসে ওঠে কবীর।পরে এই শুরু হয় বিবাদ এবং সেই থেকে সূত্রপাত হয় একটি অস্বাভাবিক ঘটনার।স্ত্রীর এই অবহেলা,অনৈতিক সম্পর্ক,ভালবাসার বিশ্বাসঘাতকতা কবীরের জীবনকে বিষিয়ে তুলেছিল সীমাহীন ক্রুদ্ধতা আর নির্মমতায়।কনা সেদিনই সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছিল,যেদিন সে পর্দা ছেড়ে জিন্স ধরেছিল।
কনার এই আচরন সহ্য করতে না পেরে কবীর একদিন তার উপর হিংস্র হয়ে উঠে।কবীর তার স্ত্রীর উপর খড়গ হস্ত হয়ে উঠে।মুহূর্তে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে কবীর তার স্ত্রী কনার উপর ঝাঁপিয়ে পরে।কনা কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই কনাকে বিছানাতে ফেলে,কবীর তার আঙুল কনার চোখের মধ্যে দিয়ে চোখের মনি বের করে আনে।মুহূর্তে কনা তার চোখের ইহজাগতিক জ্যোতি হারিয়ে ফেলে।চোখ একটি মহামুল্যবান জিনিস,যা কনা তার হারানোর মধ্য দিয়ে বুঝতে পারে।
কনা হারালো তার মুল্যবান চোখ।এদিকে স্ত্রীকে নির্যাতন করার অভিযোগে কবীরকে পুলিশ গ্রেফতার করে।এমনিতেই কবীর ছিল মানসিক বিকারগ্রস্ত, তারপর স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করলে তার জ্ঞান বুদ্ধি সমুলে বিনষ্ট হয়ে যায়।অবহেলা অযত্নে আর নিঃস্ব ও সহায় সম্বলহীন অবস্থায় কবীর পরপারে পাড়ি জমায়।অথচ কত গভীর ছিল তাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক।সপ্তাহে দু-চার দিন তারা ঘুরতে যেত,এক সাথে খাবার খেত হোটেলে।স্ত্রীকে অত্যাধিক ভালবাসতেন কবীর।অথচ স্ত্রীর এই আচরন তাকে নির্মম হতে বাধ্য করেছিল।
কবীর আজ প্রয়াত।কনা বিদেশ থেকে চোখের চিকিৎসা করিয়ে আনলেও কোন লাভ হল না।যেদিন সে ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেছিল সেদিন বিমানবন্দর থেকে নেমেই দেখেছিল,এদেশের সবুজ শ্যমল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।কিন্তু আজ সেই একই বিমানবন্দরে নেমে আর তার সেই সৌন্দর্য দেখার সৌভাগ্য হল না।এমনকি একমাত্র মেয়ের চেহারা দেখার সৌভাগ্যও হল না।মেয়েকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বুক ফাটা আর্তনাদ করে কনা বলছে,"মা আমি তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না"।
হায়!! হিজাব থেকে জিন্স।এভাবেই একটি সুখের সংসারকে ভেঙ্গে তছনছ করে দিল।কনা হারাল তার দৃষ্টিশক্তি আর কবীর হারালো তার প্রাণ...
No comments:
Post a Comment