এক.
বর্তমান সমাজে অহরহ পরকিয়া , ডিভোর্স , দাম্পত্য জীবনে অশান্তির মূল কারণ পরিবারের মধ্যে ইসলাম না থাকা । আর যেপরিবারে ইসলাম থাকবে না সে পরিবারে থাকবেনা আল্লাহ ভীতি এবং নিজ কর্মের জবাবদিহিতা । এতে করে শয়তানের পরিকল্পনা অনুযায়ী যাচ্ছেতাই করে যাওয়া যায় । যার দরুন ঘরে বৌ থাকা সত্তেও পর-নারীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ কিছু অনৈসলামিক পুরুষের জন্য মামুলি ব্যাপার। এভাবে একটা পর্যায়ে ঐ পুরুষরা নিজ বৌয়ের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং পরকিয়ায় জড়িয়ে যায় , এরপর পারিবারিক অশান্তি , এমনকি ডিভোর্সের মত ঘটনাও ঘটে । আর এটা ঘটে ঐ পুরুষ গুলোর মধ্যে আল্লাহ ভীতি না থাকার কারণে । আল্লাহ ভীতি তো সেটাই যা স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর আল্লাহর জন্য নিজেদের চোখ ও অন্তরকে হেফাজত করে এবং আল্লাহর জন্য একে অপরকে গভীর ভাবে ভালবাসে । যে ভালবাসা বিয়ের দিন যেমন থাকে , বিয়ের ৩০ বছর পরেও একই রকম থাকে । আর এটা হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য রাহমাত । তারা আল্লাহর জন্য নিজেদের চরিত্র হেফাজত করেছেন বলে আল্লাহ তাদের দু'জনের মধ্যে এমন গভীর ভালবাসা স্থাপন করে দিয়েছেন । ইসলামের বিপরীত স্রোতের মানুষগুলোর জন্য যা শুধু কল্পনা ! আমাদের সমাজে তথাকথিত মা-বাবারা তাদের সন্তানদের বিয়ে দেয়ার সময় তাকওয়া দেখে বিয়ে দিতে চাই না । তারা দেখে ছেলে কত টাকার মালিক , কত উচ্চে তার বংশ , কত গুলো ডিগ্রী আছে ছেলের বাস্কেটে । অথচ , একবারের জন্য ভাবতে চাই না , যে ছেলের কাছে সারা জীবনের জন্য তার মেয়েকে দিচ্ছে , সে ছেলের চরিত্র ঠিক কিনা বা ছেলেটির পরিচালিত জীবনে আল্লাহ ভীরুতা আছে কিনা??
একইভাবে দেখা যায় ছেলেদের ক্ষেত্রে , সুন্দরী বৌয়ের খুঁজে তারা তাকওয়াবান স্ত্রীর কথা ভুলে যায় । একসময় দেখা যায় , সেই সুন্দরী বৌ তাকে ফেলে চলে যায় বা পরকিয়ায় পতিত হয় বা তার নিজের রুপের অহংকারে সংসারে সবসময় অশান্তি লেগেই থাকে । অথচ , রাসুল(সাঃ) বলেছেন , দুনিয়ার যত সম্পদ আছে , তার মধ্যে উত্তম সম্পদ হচ্ছে একজন নেককার স্ত্রী । আমাদের মা-বাবাদের উচিত তাদের কন্যাদের সু-পাত্রস্থ করতে চাইলে দ্বীনদার,পরহেজগার , তাকওয়াবান যুবকদের সাথে বিয়ে দেয়া । এতে করে কন্যাও সুখী হোল এবং সমাজেও পরকিয়া , ডিভোর্সের মত ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে । এই ব্যাপারে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশনা হল :-
"যার দ্বীনদারী ও আখলাক-চরিত্রে তোমরা সন্তুষ্ট, এমন কেউ
প্রস্তাব দিলে তার সাথে তোমরা বিবাহ সম্পন্ন কর । তা না
করলে পৃথিবীতে ফিৎনা দেখা দেবে ও ব্যাপক ফ্যাসাদ ছড়িয়ে
পড়বে ।" [তিরমিযী, হাদীস : ১০৮৪]
দুই.
আমরা সবাই চাই আমাদের স্পাউস যেন খুব ভাল হয় , চরিত্রবান
হয় , স্যাক্রিফাইস মাইন্ডের হয় । আপনি যদি আসলেই আপনার
দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও সুখী দেখতে চান তাহলে আপনার
থেকে অবশ্যই ইসলামের হুকুম-আহকামের দিকে আসতে হবে । মনে রাখবেন , একজন তাকওয়াবানের পক্ষেই সম্ভব নিজেকে সৎ ,
চরিত্রবান করে গড়ে তোলা । কারণ , আল্লাহ ভীরুতার কারণে সে সৎ হয় , চোখ ও অন্তরের হেফাজতকারী হয় , সর্বোপরি দাম্পত্য জীবনের জন্য একজন উত্তম স্পাউস হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে সমর্থ হয় । সে জানে সে যদি তার স্পাউসের হক ঠিক মত আদায় না করে তাহলে কাল হাশরের ময়দানে সে আল্লাহর দরবারে কঠিন ভাবে জবাবদিহি দিবে ।
ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নাই এমন কাওকে যদি আপনি বিয়ে
করেন তাহলে আপনি অবশ্যই ঐ স্পাউসকে নিয়ে চিন্তিত থাকবেন , কারণ সে যেকোন সময় শয়তানের ধোঁকায় পরতে পারে। আর এমন পরকিয়া , দাম্পত্য জীবনে কলহের নজির আমদের সমাজে অনেক আছে ।
তাই বিয়ে করলে এমন একজনকে বিয়ে করুন যে ,
* আপনাকে চিন্তা মুক্ত রাখবে ।
* আপনার সাথে সদাচারণ করবে ।
* আপনার হক ঠিক মত আদায় করবে ।
* আপনাকে আল্লাহর জন্য অন্তর থেকে ভালবাসবে ।
* আপনার বিপদ-আপদে আপনাকে সাহায্য করবে , সবর ধারণ করার
শক্তি যোগাবে এবং সঠিক পরামর্শ দিবে ।
* যার স্পর্শে আপনার ঈমান বৃদ্ধি পাবে ।
* যে আপনাকে তাহাজ্জুদ ও ফজরের সময় জাগ্রত করবে ।
আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি সদয় হোন, যে রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং তার স্ত্রীকেও জাগায়, আর স্ত্রী যদি উঠতে দ্বিধা করে তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ সেই মহিলার প্রতি সদয় হোন, যে রাতে ঘুম থেকে উঠে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে এবং নিজের স্বামীকেও জাগায়,আর স্বামী উঠতে দ্বিধা করলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।"# রিয়াদুস সলিহীন : ১১৮৩
[ইমাম আবু দাউদ সহীহ সনদে এ হাদীস রিওয়ায়াত করেছেন]
** এক কথায় আখেরাতেও আপনারা দু'জন এক সাথে থাকার জন্য দুনিয়াতে বিশ্বস্ততার ক্ষেত্রে যে থাকবে পূর্ণ বিশ্বস্ত । ইন শা
আল্লাহ ...
তাই বিয়ে করার ক্ষেত্রে এমন কাওকে বিয়ে করা উচিত যে আপনাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসবে এবং আপনিও তাকে আল্লাহর জন্য ভালবাসবেন । কারণ হাদীসে আছে ,
"যারা আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালবাসবে , আল্লাহও
তাদের পরস্পরকে আল্লাহর অনুগ্রহ দিয়ে ভালবাসবেন ।"
তিন.
একজন দ্বীনহিন মানুষকে বিয়ে করার আগে আপনি যদি ভাবেন
বিয়ের পর বুঝিয়ে মানিয়ে ঠিক করে নিব তবে এটা ভাবা ভুল। আপনি যদি ভাবেন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কতো মাটির মত, ইচ্ছে হলেই দাওয়াত দিয়েই সঠিক পথে নিয়ে আসতে পারব। এটা ভাবাও ভুল।আপনি যাকে চাইবেন তাকেই সঠিক পথে আনতে পারবেন না যদি আল্লাহ তাকে হেদায়াতের পথ না দেখান।অনেকে বলে কৌশল খাটিয়েই তো স্বামী স্ত্রীকে, অথবা স্ত্রী স্বামীকে পথে নিয়ে আসতে পারে। হয়না যত কৌশল অবলম্বন করুক, অনেক কিছুই এত সহজে হয়না। ঐ মানুষটিকে কিভাবে এত সহজে ঐ লেভেল থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা যায়,যাকে তার বাবা ইসলামের সাথে পরিচিত করিয়ে দেয়নি? যারা নামকা ওয়াস্তে মুসলিম, আল্লাহর হুকুম পালনের ধারে কাছেও যায় না,তাদেরকে কিভাবে এত সহজে ঠিক করা যায়?
সূরা নূরের এই আয়াতটির সঠিক ব্যাখ্যাটা জানতে মন চায় যেখানে বলা হয়েছে ভালোর জন্য ভালো,আর খারাপের জন্য খারাপ। যে বিন্দু পরিমাণ ইসলাম মেনে চলতে চান তাদের প্রতি অনুরোধ নেককার পুরুষ অথবা নারীকে বিয়ে করুন। যাকে বিয়ে করে আপনার আমল অনেক ভালো হবে।অনেক বেশি ইসলামের উপর চলা সহজ হবে।এমন যেন না হয় কাউকে হেদায়াতের সঠিক পথ দেখাতে বিয়ে করে নিজেই অন্ধকারে হারিয়ে যান।
চার.
"দাম্পত্য জীবনে রোমান্টিক টিপস "(জনৈক এক ভাই বলেছেন)..
--------------------------------------------
স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে ওয়াক্ত হওয়ার সাথে সাথে সলাহ আদায়ের ব্যাপারে সিরিয়াসলি তাগিদ দিন । স্বামী ঘরের বাইরে থাকলে ফোন করে স্ত্রীর খবর নিন , তদ্রুপ স্ত্রীও স্বামীকে ফোন করে খোঁজ-খবর নিন । এতে সম্পর্ক মজভুত হয় ,পরস্পরের প্রতি ভালবাসা বৃদ্ধি পায় ।
প্রিয় ভাই ,
আপনি যখন শেষ রাতে সলাহ(তাহাজ্জুদ) আদায় করতে আপনার
সঙ্গিনীকে জাগিয়ে দিবেন এবং পরস্পর সলাহ আদায় করবেন ,
তখন সলাহ শেষে তসবিহ পাঠে আপনার সঙ্গিনীর হাতের আঙ্গুল
(গিরা) গুলো ব্যাবহার করুন । এই জন্য যে , সওয়াবের ভাগিদার
যেন আপনার স্ত্রীও হয় । আর দুয়া করুন , আল্লাহ যেন জান্নাতেও
আপনাদের দু'জনকে এভাবে একত্রিত থাকার তাওফিক দান করেন। ইন শা আল্লাহ ।
No comments:
Post a Comment